টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের পরিধি বাড়াতে হবে

| বুধবার , ২২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ দাবি করেছেন, দুই দশক ধরেই ‘সিন্ডিকেট করে’ নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে যে তুমুল আলোচনা চলছে, সেই সিন্ডিকেট বন্ধ করা সহজ নয়। তাঁর দাবি, বাস্তবসম্মত কারণেই অনেক কিছু করা যায় না। শনিবার রাজধানীতে কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সংস্কার বিষয়ে এক সেমিনারে এই কথা বলেন তিনি।

মূল্যস্ফীতির পেছনে বাজার কারসাজির যে অভিযোগ, সে প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘সিন্ডিকেট বন্ধ করা সহজ নয়, এটা অনেক বড় বিষয়। এসব নিয়েই বাজার চলে। বাস্তবসম্মত কারণেই অনেক কিছু করা যায় না।’ তবে সিন্ডিকেট যেন মাথাচাড়া না দিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা শুরু হলে কেউ দায় স্বীকার করতে চায় না। তদন্তের আগে সরকারের কাছেও তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য থাকে না। এই সুযোগে চলতে থাকে একে অপরের ওপর দোষ চাপানো। দেশে বছরের পর বছর নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিরতার পেছনে কখনও আমদানিকারক, কখনও পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সংঘবদ্ধ অপতৎপরতা দায়ী বলে চিহ্নিত হয়েছে। কখনও আবার চিহ্নিত হয়েছে পরিবেশক, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সরাসরি দায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাজার সম্পর্কিত সব কটি গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ কারসাজিও চিহ্নিত হয়েছে।

কারা দায়ী, সরকার তা বুঝতে পারা এবং হস্তক্ষেপের আগেই ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, সরবরাহ চেইনে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আবার বিপুল বিনিয়োগের প্রশ্ন জড়িত থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধে বাজারে প্রতিযোগিতার ভারসাম্যও তৈরি করা যাচ্ছে না। এখানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণেও সরকারকে অনেক ক্ষেত্রে আপোষ করতে হচ্ছে।

অস্থির বাজারের সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভরসার জায়গা হলো টিসিবির পণ্য। বাজারে কখনও কখনও সুনির্দিষ্ট কোনো পণ্যের, আবার কখনও একযোগে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। যদিও এ ঘাটতির পেছনে কাজ করে সিন্ডিকেট। এমন কাজে বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে কারসাজির ভূমিকাই বেশি থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

বিশ্লেষকরা বলেন, ‘দেশে সব নিত্যপণ্যের স্থানীয় উৎপাদন হয় না। কিছু পণ্যের উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। ফলে উৎপাদন হয় না কিংবা কম উৎপাদন হয়এমন সব পণ্য আমদানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভোক্তার চাহিদা পূরণ করা হয়। এদিকে আমদানি বাজার সব সময় আবর্তিত হতে থাকে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। কখনও কমে, কখনও বাড়ে। ক্ষেত্রভেদে সকালবিকেলেও এই উত্থানপতন দেখা যায়। এরই প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানিকারক দেশগুলোতে।

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি করতে হয়। যার আমদানিকারক আবার গুটিকয়েক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। কিছু পণ্যের পরিশোধন কোম্পানির সংখ্যাও নগণ্য। এর বিপরীতে এসব নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে পরিবেশক, পাইকার ও খুচরা বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়ীর সংখ্যা লাখ লাখ। ফলে কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি কিংবা দাম বেড়ে গেলে কোন স্তরে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানার উপায় কম।’

বাজার বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতিতে টিসিবির প্রয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। ১৭ কোটি ভোক্তার এই দেশে সংস্থাটির বিদ্যমান কার্যক্রম যথেষ্ট বলে মনে করছেন না তাঁরা। তবে এই বিরাট জনগোষ্ঠীর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবির যে সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন, সেটি তাদের নেই। সংস্থাটির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলে শুধু স্বল্প আয়ের মুষ্টিমেয় লোকের জন্য। সেটিও বছরব্যাপী নয়। বিক্রীত পণ্যের সংখ্যাও কম। আবার যা সরবরাহ দেওয়া হয়, তাও সীমিত।

সারা দেশে বেশির ভাগ এলাকা টিসিবির কাভারেজের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আবার টিসিবি থেকে পণ্য কেনার পরও সংশ্লিষ্ট ভোক্তাকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের জন্য নিয়মিত বাজারেরই মুখাপেক্ষি হতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম সারা দেশেই চালু করা প্রয়োজন। যেখানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়, সেখানে বিকল্প পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে