সারা দেশের পাশাপাশি রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। প্রথম দিন মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯০ জনকে টিকা দেয়া হয় চট্টগ্রামে। ২য় দিন দেয়া হয় ২ হাজার ৬৭৮ জনকে। তবে ৩য় দিন গতকাল একদিনে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬ হাজার। হিসেবে ৩ দিনে চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার (৯ হাজার ৮২৭) মানুষ করোনার টিকা নিলেন। টিকাগ্রহীতাদের সিংহভাগই অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত সম্মুখ সারির যোদ্ধা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৬ হাজার ৫৯ জন সম্মুখ সারির যোদ্ধা করোনার টিকা নিয়েছেন। গতকাল টিকাদানের এ সংখ্যা প্রথম দিনের তুলনায় ৬ গুণ এবং ২য় দিনের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি। গতকাল টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৪৮ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৬১১ জন মহিলা। প্রথম ও ২য় দিনের মতো ৩য় দিনেও উৎসাহ-উদ্দীপনায় করোনার টিকা নিতে দেখা যায় সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের। টিকা গ্রহণকালীন কারো মাঝে কোনো ধরনের ভয়-শঙ্কা চোখে পড়েনি। বরং টিকাদান কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। এদিকে, রোববার উদ্বোধনের পর ৩ দিনে টিকাগ্রহণকারী কারো শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, টিকা গ্রহণে মানুষের উৎসাহ দিন দিন বাড়ছে। এতে করে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে চাপও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রথম দিন ২৩৫ জন ও ২য় দিন ৪২৬ জন টিকা নেয়। গতকাল একদিনে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ৩য় দিন গতকাল ১ হাজার ৯৫ জন সম্মুখ সারির যোদ্ধাকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। এর মধ্যে পুরুষ ৭৩০ জন এবং মহিলা ৩৬৫ জন। আজ বুধবার থেকে দৈনিক ১ হাজার জনকে টিকাদানের টার্গেট রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মহানগরের ১১টি কেন্দ্রে গতকাল সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৩২ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানান চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। এর মধ্যে ২ হাজার ৩০৫ জন পুরুষ এবং ৭২৭ জন মহিলা। মহানগরে গতকাল নতুন করে আরো দুটি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। কেন্দ্র দুটি হলো চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন ছাপা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল। গত সোমবার চসিক জেনারেল হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল ও চসিক বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়। এ নিয়ে মহানগরে ১১টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম চালু হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, বিমান বাহিনী হাসপাতাল ও বিএমএতে টিকাদান কার্যক্রম নিজস্ব বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আর চমেক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চসিক জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য কেন্দ্রে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধিত যে কেউ টিকা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে পরবর্তীতে আরো কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানান ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। প্রসঙ্গত, করোনার টিকাদানে মহানগরে ১৫টি কেন্দ্র নির্ধারণ করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন কমিটি। এসব কেন্দ্রে ৬৫টি টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে।
মহানগরের পাশাপাশি দ্বিগুণেরও বেশি টিকা দেয়া হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে। ১৪ উপজেলায় প্রথম দিন ৬৬৭ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। ২য় দিনে দেয়া হয় ১ হাজার ২১০ জনকে। আর ৩য় দিন গতকাল উপজেলাগুলোতে মোট ৩ হাজার ২৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৪৩ জন পুরুষ এবং ৮৮৪ জন মহিলাকে টিকা দেয়া হয়েছে।