নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে গণ টিকাদান। তবে টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তা নিয়ে শঙ্কাই বা কতটুকু- এসব প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। সব ধরনের টিকারই কিছু না কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের যে টিকা দেওয়া হবে, সেটিও ব্যতিক্রম নয়। তবে ‘কোভিশিল্ড’ নামের এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় যতটুকু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা নিয়ে আতঙ্ক বা অস্বস্তির কারণ নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। খবর বিডিনিউজের।
অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের এই টিকা গড়ে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পেরেছে। বাংলাদেশ কিনেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বে টিকার সবচেয়ে বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।
কোভিশিল্ড টিকার সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সেরাম ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এ টিকা নেওয়ার পর হালকা গা ব্যথা, শরীর গরম, লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি, টিকা দেওয়ার স্থান ফুলে যাওয়া, সেখানে ক্ষত হওয়া, অসুস্থ-ক্লান্ত বোধ করা, ঠাণ্ডা বা জ্বর জ্বর লাগা, মাথা ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর, ফ্লুর উপসর্গ- ইত্যাদি দেখা দিতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। টিকা নিয়েছেন এমন ১০ জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার মাথা ঘোরা, ক্ষুধামান্দ্য, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠার মতো কিছু অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কখনও কখনও দেখা দিতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে প্রতি ১০০ জনে একজনের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে অঙফোর্ডের টিকার ‘মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ নেই। এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগটি বাংলাদেশে হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা আছে সে বিষয়ে আরও শক্ত প্রমাণ থাকত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পরামর্শক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারতের আবহাওয়া, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। এ কারণে সেখানে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ভালো ফলাফল বাংলাদেশের জন্য আশা জাগানিয়া। তিনি বলেন, ‘মন্দের ভালো সেখানে প্রয়োগ হয়েছে এবং যে ফলাফল, তাতে কোনো আশঙ্কার কারণ নেই। টিকাটি যথেষ্ট কার্যকর এবং নিরাপদ। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় বাংলাদেশে এই টিকা কার্যকর হবে। হয়তো দুই-একজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটা খুব অস্বস্তি হওয়ার মতো না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান খসরুর মতে, অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তার অসুবিধার চেয়ে মহামারীর সময়ে এই টিকা পাওয়ার সুবিধাই বেশি। তিনি বলেন, ‘এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির মাত্রা গ্রহণযোগ্য। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি অনেক মানুষকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যাই তাহলে টিকা দিতে হবে।’ তবে টিকা দেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে- এমনটা ধরে নিয়ে তার জন্য প্রস্তুতি আগেই নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।