আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আজ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে দিবসটি ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ, বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যু। প্রতিদিন টালি খাতায় হিসাব বেড়েই চলেছে। কোভিড-১৯এর সামনে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে কত দুর্বল, তা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। আমরা জানি, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কেননা, তাঁরা জানেন, পরিকল্পিত ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতাই পারে বিভিন্ন বাহকবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। তবু নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে। অনিশ্চয়তা, সমন্বয়হীনতা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বৈষম্য, দুর্নীতি এবং লজিস্টিক ও জনবলের অভাব দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় কতটা নাজুক। তবে কোভিড টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সরকার, তা অভূতপূর্ব ও অকল্পনীয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় থাকায় দুই দেশের সরকারপ্রধানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে দ্রুত বাংলাদেশে টিকাপ্রাপ্তিতে। এ ছাড়া ভারত সরকার ২০ লাখ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করে। এই টিকার ক্রয়কৃত প্রথম চালানে ৫০ লাখ, এর সঙ্গে ২০ লাখ পাওয়ায় বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতেই টিকা দেওয়ার উদ্বোধন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অতি সম্প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রদান বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সংশয় বাড়ে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নির্দেশ জনগণের মনে আশার সঞ্চার করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৮ এপ্রিল থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অসুবিধা হবে না। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। টিকা যা আছে, তা দিতে দিতেই আরও টিকা চলে আসবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা যদি সুষ্ঠুভাবে না চললে তার ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে এই করোনা মহামারিতে। তাই স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে, তা পূরণ হয়। যেমন এমন কোনো একটা ব্যবস্থা নেওয়া হলো, যার ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার রেসপনসিভনেস বাড়ল। সেটি একক বা সর্বজনীন-সবভাবেই হতে পারে। কোনো একজন রোগী হাসপাতালে গেলে নির্দিষ্ট একটি সময়ের ভেতর তাঁর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে,এটিই স্বাস্থ্যব্যবস্থার রেসপনসিভনেস। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। আগে যাঁরা চিকিৎসক হতে চাইতেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সেবা করা। এখন মানসিকতার অনেক তারতম্য ঘটেছে। গত ২০ বছরে এর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা তিনটি পক্ষকে দায়ী করেছেন : চিকিৎসক, রোগী ও সিস্টেম। দেখা যায়, কোনো উপজেলা হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকের রোগী নিয়ে গেলেও তাঁর চিকিৎসা ভালো করে হয় না। কারণ, সেখানে সেই ব্যবস্থা নেই। এটি অনেক রোগী বুঝতে পারেন না। এ থেকে হয় ভুল-বোঝাবুঝি। রোগীর পরিবারের সদস্যদের হাতে চিকিৎসকের মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটছে এ দেশে। এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সচেতনতা জরুরি।
এমন এক সময়ে স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে, যখন মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। যদিও করোনার সংক্রমণ বহন করার একমাত্র বাহক হচ্ছে মানুষ। যদি এই মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা শুনে সতর্ক থাকতেন, তাহলে এতো বিস্তার ঘটতো না। এখন কিন্তু এই ঢেউ সুনামির মতো প্রলয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই জনসচেতনতা জরুরি।