টিকার জন্য সোয়া চার হাজার কোটি টাকা

আওতায় আসবে ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ ।। চট্টগ্রামে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে হবে ৫ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ।। একনেকে অনুমোদন

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বাড়াতে আরও ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার, যেখানে টিকা আমদানি, সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য থাকছে সোয়া চার হাজার কোটি টাকার বেশি। আর তাতে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের বরাদ্দ বেড়ে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা হচ্ছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পটি সংশোধন করে টিকা কেনার জন্য এই অর্থায়ন অনুমোদন দেওয়া হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আজকের বৈঠকে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধন করা হলো। এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৫ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট হবে। এই অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ৫০ কোটি ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ১০ কোটি ডলার দেবে। আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭২ কোটি টাকার যোগান দেবে বলে জানান মন্ত্রী। সংশোধিত প্রকল্পে টিকা কেনা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খরচ মিলিয়ে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অবকাঠামো বৃদ্ধি, চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাসহ অন্যান্য কাজে বাকি টাকা ব্যয় হবে। খবর বিডিনিউজের।
এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি এবং বিশ্বাস করি, ভ্যাকসিন আমরা পাব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বাস্থ্য সেবা সচিব মো. আব্দুল মান্নানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির জন্য যে চুক্তি হয়েছিল, সেটি জিটুটি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তি ছিল, না সেরাম ইনস্টিটিউট আর বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ছিল। উত্তরে সচিব বলেন, ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন, আমরা সময় মতো তা পাব।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আমদানি করা হচ্ছে। মহামারীর অগ্রাধিকার বিচারে স্বাস্থ্যকর্মী, শ্রমঘন এলাকা, আইন-শঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাইকে পর্যায়ক্রমে এই টিকার আওতায় আনা হবে।
অঙফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের এঙক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। ওই তিন কোটি ডোজ নাগরিকদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ জানিয়েছিলেন, প্রতি ডোজ টিকার ক্রয়মূল্য হবে ৪ ডলার। সব খরচ মিলিয়ে দাম পড়বে ৫ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে ৪২৫ টাকার মতো।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিরতরণ। এছাড়া ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর মেশিনসহ আধুনিক মাইক্রো বায়োলজি ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং আরটি পিসিআর কিট, অ্যান্টিজেন কিট ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করা হবে। আইইডিসিআর এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) বায়োসেফটি লেভেল থ্রি ল্যাব স্থাপন করা হবে।
৪৩টি জেলা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), দেশের পাঁচটি পোর্ট অব এন্ট্রিতে মোট সাতটি মেডিকেল স্ক্যানিং ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর বাইরে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি সিভিল সার্জেন্ট অফিসে রোগতত্ত্ব ইউনিট স্থাপন করা হবে। ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ৬২টি জেলা হাসপাতালে হবে ইনফেকশাস ডিজিজ ইউনিট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে কে কখন টিকা পাবে
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে চারটি ইটভাটা উচ্ছেদ ৯ লাখ টাকা জরিমানা