দেশে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে করোনার ২য় ডোজের টিকাদান। এর আগেই প্রথম ডোজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কিন্তু মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম ডোজের ৬৮ হাজার ৫৪৭ ডোজ টিকা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৩০ হাজার ৩৬৯ ডোজ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৩৮ হাজার ১৭৮ ডোজ টিকা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। যদিও ২য় ডোজ শুরুর আগেই প্রথম ডোজের এসব টিকা প্রদান সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী- গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৩ জন মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩১ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪২২ জন। যদিও প্রথম ডোজের জন্য প্রাপ্ত টিকার মধ্যে মহানগরে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ জন টিকা পাবেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩১ জন টিকা নিয়েছেন। হিসেবে মহানগর এলাকায় আরো ৩০ হাজার ৩৬৯ ডোজ টিকা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। আর প্রাপ্ত টিকার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে টিকা পাবেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪২২ জন প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে প্রথম ডোজের আরো ৩৮ হাজার ১৭৮ ডোজ টিকা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। হিসেবে মহানগরে প্রাপ্যতার ৮৮ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রাপ্যতার ৮৩ শতাংশ মানুষ করোনার প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ টিকাগ্রহণে মহানগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চল এখনো পিছিয়ে রয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- টিকা গ্রহণের পাশপাশি টিকার জন্য অনলাইন নিবন্ধনেও পিছিয়ে রয়েছে গ্রামাঞ্চল। গতকাল দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের মোট ৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৬ জন অনলাইনে টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৬ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭০০ জন। গ্রামাঞ্চল পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টিকাগ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চল এখনো পিছিয়ে রয়েছে। টিকাগ্রহণে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে আরো বেশি সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকার জন্য অনলাইন নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ফটিকছড়ি, বাঁশখালীসহ বেশ কয়টি উপজেলায় এ ধরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
এদিকে, প্রথম দিকে টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়লেও এখন সেই ভিড় আর নেই। শুরুর দিকে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় একদিনে ২০ হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছিল। কিন্তু টিকাগ্রহণের দৈনিক এ সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে ৩ হাজারের নিচে নেমেছে। গতকাল (২৫ মার্চ) একদিনে মহানগরসহ জেলায় টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৯৪৯ জন। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন। আর উপজেলা পর্যায়ে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ১ হাজার ১৮১ জন।
উল্লেখ্য, সারাদেশের পাশাপাশি ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে চট্টগ্রামেও। প্রথম দিন মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯০ জনকে টিকা দেয়া হয় চট্টগ্রামে। ২য় দিন দেয়া হয় ২ হাজার ৬৭৮ জনকে। ৩য় দিন একদিনে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়। হিসেবে প্রথম ৩ দিনে চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার (৯ হাজার ৮২৭ জন) মানুষ করোনার টিকা নেন। ৪র্থ দিন একদিনেই নেন ১০ হাজার। এরপর থেকে গড়ে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার মানুষ টিকা নেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে দৈনিক টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমে ৫ হাজারের নিচে নেমেছে।