পতেঙ্গায় অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ফসফেটিক সার কারখানা টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে টিএসপি কারখানা থেকে সালফার ড্রাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী কারখানার গেটে চড়াও হয়েছেন। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না মর্মে আশ্বাস দেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। টিএসপি কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পতেঙ্গার টিএসপি কমপ্লেক্স কারখানার সালফিউরিক এসিড প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে কারখানা চালু করার সময় বিপুল পরিমাণ সালফার ড্রাই অক্সাইড গ্যাস বের হয়ে তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের গতিবেগ লোকালয়ের দিকে থাকায় শত শত মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। প্রায় ৩০ জন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে চারজনকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস নির্গত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা কারখানার গেটে চড়াও হন এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। গ্যাস নির্গত হওয়ার খবর পেয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ চালু হওয়া প্লান্ট দ্রুত বন্ধ করে দেয়। এতে গ্যাস নির্গত হওয়া থেমে যায়। তবে শুরুতে নির্গত হওয়া গ্যাস বেশ কয়েক ঘণ্টা বাতাসে থাকে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশ অসুবিধা হয়।
পতেঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল যুব সংগঠক ওয়াহিদ হাসানের নেতৃত্বে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমানের সাথে বৈঠক করেন। এসময় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকজনের চিকিৎসা খরচ প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে বৃক্ষরোপণ এবং নষ্ট হওয়া ফসলাদির ক্ষতিপূরণ বাবদ কৃষকদের সার ও বীজ প্রদানের দাবি জানান। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থানীয়দের দাবি মেনে নেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষদের চিকিৎসা খরচ প্রদান করার ব্যবস্থা করেন। একই সাথে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার আশ্বাস প্রদান করেন।
টিএসপি কমপ্লেক্সের পদস্থ একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, বিষয়টি অনভিপ্রেত। এটি ইচ্ছেকৃত নয়। বিদ্যুুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষ লাইন থেকে টিএসপি কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হলেও মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। এই ধরনের ‘আনসিডিউলড শার্ট ডাউন’ থেকে পুনরায় প্লান্ট চালু করার সময় বেশ কিছু সালফার ড্রাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ গ্যাসের বিষয়টি মাথায় রেখে বাতাসের গতিবেগসহ বিভিন্ন বিষয় খেয়াল করে প্লান্ট চালু করে। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে বাতাসের গতিবেগের বিষয়টি খেয়াল করা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। এতে নির্গত কিছু গ্যাস লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কিছু মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন।
প্রসঙ্গক্রমে কারখানার শীর্ষ একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জানান, এই ধরনের কারখানাগুলো সচরাচর লোকালয় থেকে স্থাপন করা হয়। ৪৭ বছর আগে টিএসপি কমপ্লেক্স যখন করা হয় তখন এলাকাটিতে এত বসতি ছিল না। কিন্তু দিনে দিনে সেখানে গণবসতি হয়ে গেছে। এখন ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কয়েক লাখ লোক বসবাস করেন। বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর বিপুল সদস্যও এলাকাটিতে বসবাস করেন। সবকিছু মিলে টিএসপি কর্তৃপক্ষ এই ধরনের পরিস্থিতিতে যাতে গ্যাস নির্গত না হয় সেই ব্যবস্থা করে থাকে। আবার কখনো গ্যাস নির্গত হলেও তা যেন লোকালয়ে ছড়াতে না পারে সেই পদক্ষেপও নেয়ার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে গ্যাস কী করে ছড়ালো তা খতিয়ে দেখতে কারখানার তিনজন মহাব্যবস্থাপকসহ চারজনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী চারদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এতে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান জানিয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সমস্যাটি হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আর কোনো দিন যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। টিএসপি কমপ্লেক্সের সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো বলে তিনি উল্লেখ করেন।