বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত ও ঘুষ কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকারে আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর (সিটি মিনিস্টার) দায়িত্বে আছেন তিনি। অর্থাৎ, ব্রিটেনে আর্থিক খাত থেকে দুর্নীতি দূর করাও তার দায়িত্বের অংশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, দেশটির মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি) গত বৃহস্পতিবার টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। খবর বিডিনিউজের।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছিলেন। বাজারদরের চেয়ে বেশি খরচের ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে তিনি ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা) ‘আত্মসাত’ করেছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর রুল জারি করে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। দুদিন পর এ বিষয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগও দুদক হাতে পেয়েছে। এসব দুর্নীতিতে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করেছে দুদক।
দুদক অনুসন্ধানের ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যেও তোলপাড় শুরু হয়। রূপপুরের চুক্তির সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তোলা শেখ হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপের ছবি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো। এঙপ্রেস ইউকে লিখেছে, টিউলিপ প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিমের (পিইটি) সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলে এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার টিউলিপের দপ্তরে যান। ওই কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলে সেগুলোর জবাব দেন টিউলিপ। এ বিষয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি টাইমস। আর ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা দপ্তর বলেছে, আগে আমরা যেমন বলেছি, প্রতিমন্ত্রী (টিউলিপ) এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বাংলাদেশের দুদক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল লিখেছে, অনুসন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন অন্যদের সঙ্গে টিউলিপের বিষয়েও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে টিউলিপের বক্তব্য জানতে শিগগিরই ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশে ফৌজদারি তদন্তের বিষয়টি যুক্তরাজ্যেও একটি আনুষ্ঠানিক চেহারা পাবে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা ডেইলি মেইলকে বলেছেন, টিউলিপের জবাবের ওপর নির্ভর করবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কি না। মামলা দায়ের হলে বাংলাদেশ পুলিশের খাতায় একজন সন্দেহভাজন আসামি নাম উঠবে এই ব্রিটিশ এমপির। ডেইলি মেইল শনিবার আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ওই বৈঠকে স্বাক্ষরিত ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সে সময় টিউলিপ ছিলেন লেবার পার্টির কাউন্সিলর। দুই বছর পরের নির্বাচনে তিনি এমপি হন। মস্কোতে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে রাশিয়ার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে সই করেন হাসিনা।