অর্থবছরের এক মাসের বেশি সময় বাকি থাকতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের মাইলফলক অর্জন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া গত ২৪ মে পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। সেই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার এখনো ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ পিছিয়ে আছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার অর্থবছরের ১১ মাস না পেরোতেই দ্বিতীয়বারের মতো ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার তৎপরতার কারণে। মিথ্যা ঘোষণায় আটক চালান থেকে রাজস্ব আদায়ের হারও বাড়ছে। অন্যদিকে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি কমে যাওয়া এবং মিথ্যা ঘোষণা আটক পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের শুল্ক করে দ্বিগুণ জরিমানার কারণে রাজস্ব আয়ে গতি পেয়েছে। এছাড়া উচ্চ শুল্কের অনেক পণ্যের আমদানি বাড়ার কারণেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমসে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) ২৪ মে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে সাড়ে ৫১ হাজার ২৩৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার ৮৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে কাস্টমসের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা পিছিয়ে আছে।
কাস্টমস কর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। মাসভিত্তিক হিসেবে অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৫ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৫ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৫ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, মার্চ মাসে ৫ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, এপ্রিল মাসে ৬ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং জুন মাসে ৫ হাজার ১৩২ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি বাড়ার কারণে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। সরকারি রাজস্ব সুরক্ষায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রত্যেক কর্মকর্তা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণার চালানে আমরা দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করছি। এর ফলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির হারও কমেছে। চলতি শেষ হতে আরো এক মাস ৭ দিন বাকি। আমাদের সামনে জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা আছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস নতুন রেকর্ড গড়বে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।