বড়দিনের সাথে দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি, টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। হাজার হাজার পর্যটকে সয়লাব হয়ে গেছে সর্বত্র। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ, রামু, মহেশখালী– যেখানেই চোখ পড়ছে সেখানে দেখা মিলছে পর্যটকদের হুড়োহুড়ি। সবখানেই পর্যটকের ভিড়। এতে স্থানীয়দের চলাচলও অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। হোটেল মোটেল আগে থেকে বুকিং হয়ে যাওয়ায় অনেকেই রুম না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। হোটেল–মোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটক হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের কারণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কসহ কক্সবাজারের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাস হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ। আর এই সুযোগেই পরিবার–পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে সবাই ছুটে আসছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর কক্সবাজার। এর মধ্যে বিজয় দিবসকে উপলক্ষ করে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়। এবার সেই রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত দুইদিনে অন্তত চার লাখের কাছাকাছি পর্যটক সমাগম হয়েছে এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট পর্যন্ত ১০ লাখের কাছাকাছি পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, আগত পর্যটকরা পরিবারের সদস্য ও বন্ধু–সহকর্মীদের সাথে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের লাবণী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে সকাল থেকেই রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়ি এবং সমুদ্রের নোনা পানিতে আনন্দ–উল্লাসে মেতে উঠেছে। কেউবা ঘোড়া, বিচবাইক এবং জেটস্কিতে চড়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে অনেক পর্যটক দলে দলে যাচ্ছেন মহেশখালী, সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন, ইনানী, রামুর বৌদ্ধবিহার দেখতে।
হোটেল কক্স টুডের জিএম আবু তালেব শাহ বলেন, আগামী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হোটেল বুকিং রয়েছে। বিপুল সাড়া পেয়েছি আমরা পর্যটকদের। অনেককে রুম দিতে পারছি না। হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার কুতুব উদ্দীন বলেন, অনেক আগে থেকে আমাদের সবগুলা রুম বুকিং হয়ে গেছে। তারপরেও অনেক পর্যটক এসেছিল রুমের জন্য। আমরা কোনোভাবে রুম দিতে পারিনি। তবে আমরা পর্যটকদের নানাভাবে সেবা দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমাদের হোটেল মালিকরা এবার অনেক ভালো ব্যবসা করতেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত ভালো বুকিং আছে সবার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, ফলে সে কারণে ব্যবসা কেমন হয় বুঝা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, বড়দিন সেই সাথে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। এসব পর্যটকরা যাতে কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি টিম সৈকত ও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। কোনো অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, তিন দিনের টানা ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসার কারণে আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি কুইক রেস্পন্স টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যটকদের ছিনতাইয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পর্যটকরা যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সব মিলিয়ে কক্সবাজার সৈকতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।












