টাকা দিয়েও উপজেলা ভোটে মানুষ নিতে পারছে না আ. লীগ

চট্টগ্রামে গয়েশ্বর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ মে, ২০২৪ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

টাকা দিয়েও উপজেলা নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মানুষ নিয়ে যেতে পারছে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আজ উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য। এর আগে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি দাবি করে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপির ইশারায় যদি মানুষ ভোট দিতে না যায়, তাহলে ভেবে দেখেন আমাদের আরেক ইশারায় আপনাদের কি হবে? ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কখনো ক্ষমতায় ঠিকে থাকা যাবে না।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরের কাজীর দেউড়িস্থ একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত ‘শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে শহীদ জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা করুণ দাবি করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রিজার্ভ আছে এখন মাত্র সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার। অথচ আমাদের প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকিং খাতের কি অবস্থা সেটা তো দেশের মানুষ দেখছেই। দুইদিন পর ব্যাংকের লকারেও কোনো টাকা থাকবে না। যদি দেশের এ অবস্থা চলে তাহলে আরেকটা দুর্ভিক্ষ হতে চলেছে, যেটা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষকেও হার মানাবে। ভুখা মিছিল বের হচ্ছে না বলে হয়তো অনেকে সেটা বুঝতে পারছে না।

তিনি বলেন, ক্যান্সার, যক্ষ্মা হলে রোগ বুঝতে অনেক দেরি হয়। দেশের অর্থনীতির অবস্থাও তাই। আওয়ামী লীগের লোকেরা ছিঁচকে চোরের মতো একটু একটু চুরি করতে করতে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। লুন্ঠিত সে টাকা ফেরত আনতেও কোনো পদক্ষেপ নেই। ৭০০ টাকার জিনিস কেনা হয়েছে ২ হাজার টাকায়। কোনো যুবক আজ দেশে থাকতে চায় না।

জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন অবদান তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, দেশের স্বাধীনতা শুধু কথার মধ্যে দিয়ে আসেনি। এসেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানের কর্নেল জানজুয়া জিয়াউর রহমানের হাতে নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বলব, আপনার আশেপাশে আছে এমন কাউকে বের করেন তো যে যুদ্ধে গুলি ছুঁড়েছে। আপনার দলে মুক্তিযোদ্ধা নেই এ অপবাদ আমি দেব না, আছে। কিন্তু সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা নয়।

তিনি বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কেন? স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আজ এ যে গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব আছে কিনা বলতে সন্দেহ লাগে। শুধু একটি পতাকা উড়লেই দেশকে স্বাধীন বলা যায় না। জাতীয় সংগীত শুনলেই বুঝার কোনো উপায় নেই যে দেশে স্বাধীনতা আছে। সে কারণে আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি মানেই তারা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দী করে সরকার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। দেশনায়ক তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত হয়ে গেছেন। খালেদা জিয়া এখনও পালাননি। বেঁচে আছেন। গণভবনে বসে বসে খালেদা জিয়ার অসুস্থ শরীরের কাতরানি, কান্না শোনার জন্য আপনি টিপ্পনি কাটেন। খালেদা জিয়ার নাম যখন কানে যায় তখন প্রেসার তো ১৬০ থেকে ১৭০ উঠে যায় আপনার।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, চট্টগ্রাম ও জিয়াউর রহমান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিনি চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার এখানের মাটিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। আজকে ইতিহাস থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনোদিন সম্ভব হবে না।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আমরা একটি মানচিত্র পেয়েছি। জিয়াউর রহমান একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, মেধা ও সামর্থ্যের কারণে জিয়াউর রহমান দুইটা সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান ছিলেন জেড ফোর্সের অধিনায়ক। তাই শহীদ জিয়াকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো ইতিহাস রচিত হতে পারে না। জিয়া আছেন কোটি কোটি মানুষের অন্তরে।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ইতিহাস থেকে শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার জন্য পাঠ্যপুস্তকও বিকৃত করা হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলে জিয়াউর রহমানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। আওয়ামী লীগ এখন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ও মিথ্যা ইতিহাস শিখাচ্ছে।

আবু সুফিয়ান বলেন, ৭ জানুয়ারি একটা প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন সারা দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে। এতে জনগণের কোনো উপস্থিতি নেই, জনগণ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি, জনগণ এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং করেনি।

জালাল উদ্দীন মজুমদার বলেন, প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছে। আমরা ভোটকে বর্জন করেছি, আমরা তার ফলাফল পেয়েছি। এটাই আমাদের আন্দোলন।

হারুনুর রশীদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ইতিহাসের অংশ। রাজনৈতিক বিদ্ধেষপ্রসূত কারণে কেউ তা ম্লান করতে চাইলেও পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধকোরবানির বর্জ্য বিকেল ৫টার মধ্যে পরিষ্কারে নানা পরিকল্পনা চসিকের