লামায় ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে গতকাল শনিবার লামা থানায় মামলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬ জনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের জন্য নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে পরিবারের সদস্যদের প্রাথমিক ধারণা। এদিকে কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদ দেশে ফিরলে স্ত্রী ও দুই মেয়ের লাশ দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে লামা পৌরসভার চাম্পাতলী গ্রামের প্রবাসী নুর মোহাম্মদের বিল্ডিং ঘর থেকে তার স্ত্রী মাজেদা বেগম (৪০), বড় মেয়ে রাফি আক্তার (১৫) ও ১০ মাস বয়সী নুরী আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ, পিবিআই ও র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কেন নির্মম এই হতাকাণ্ড? গত রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার রাতে ৫ জন এবং গতকাল সকালে একজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন নিহত মাজেদা বেগমের দেবর মো. খালেক, মো. শাহ আলম, বড় বোন রাহেলা বেগম, বোন জামাই আব্দুর রশিদ, স্থানীয় মসজিদের তারাবি পড়ানো হাফেজ সাইদুুর রহমান ও স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম।
প্রবাসী নুর মোহাম্মদের ছোট ভাই মালেক জানান, ঘটনার দিন রাতে ১০টা নাগাদ নুর মোহাম্মদের ঘরে বহিরাগত লোকজন বা মেহমানের কথা শুনতে পেয়েছিলেন তার ভাই মো. খালেক। ঘরের পেছনের জানালা বন্ধ থাকায় কিংবা কে বা কারা কথা বলছে সে বিষয়ে কৌতূহল না থাকায় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ভাবী মাজেদা ও কন্যাদের সাড়া পাননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি জানাজানি হয়। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার রাতের জন্য রান্না করা খাবার যেমন রান্না করেছিল তেমনই রয়ে গিয়েছিল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় নিহত মাজেদা বেগমের বড় বোন রাহেলা বেগম বেড়াতে আসেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে চলে যান। তারপর রাতের কোনো এক সময় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
গতকাল সকালে চাম্পাতলী গ্রামে নুর মোহাম্মদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সদ্য নির্মিত নতুন বিল্ডিংটি পুলিশ প্রহরায় তালা দেওয়া রয়েছে। এ সময় নুর মোহাম্মদের মা ছকিনা খাতুন (৬৫) বলেন, নুর মোহাম্মদের মেঝ মেয়ে আফরিনসহ আলীকদমে নাতনির বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় আফরিন বেঁচে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি কোনো ধারণা করতে পারছেন না।
এদিকে, পুলিশের লাশ উদ্ধারের সময় ঘরের আলমারি ও ওয়ারড্রবের ড্রয়ার ভাঙা দেখতে পায়।
নুর মোহাম্মদের আরেক স্ত্রী আছেন। তবে তিনি এখানে থাকেন না। ওই স্ত্রীর সন্তান রাবেয়া ইয়াছমিন সাংবাদিকদের জানান, তার মা (মাজেদা) গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন। নিহত মাজেদা বেগমের শাশুড়ি ছকিনা খাতুন জানান, তাদের ঘরে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
নিহত মাজেদা বেগমের ননদ কুলসুমা বেগম জানান, নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত শেষে লামায় আনা হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুেলন্সে রাখা হবে। নুর মোহাম্মদ দেশে ফিরলে স্ত্রী ও কন্যাদের দাফন করা হবে। শনিবার রাতে রওনা দিয়ে আজ রোববার তার দেশে ফেরার কথা।
এদিকে, র্যাব-১৫ বান্দরবানের একটি টিম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় কোম্পানি কমান্ডার এএসপি নিত্যানন্দ দাশ বলেন, র্যাব ঘটনাটি ছায়া তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে যাদের সন্দেহ করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে। টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আগামী দু’একদিনের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় এখনো কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। নিহতদের ময়না তদন্তের জন্য বান্দরবান মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় নিহত মাজেদা আক্তারের মাতা লালমতি খাতুন বাদী হয়ে লামা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
        











