চকরিয়ায় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কর্মরত মেডিকেল প্রতিনিধি (এমআর) আশিক বিল্লাহ সুমনের সঙ্গে টাকা আত্মসাৎ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) এরশাদ আলীর। এই অবস্থায় টাকা আত্মসাতের বিষয়টি কোম্পানিকে বলে দেবে এই আশঙ্কাতেই এসআর এর ওপর ক্ষুব্ধ হন এমআর। শেষ পর্যন্ত এসআরকে পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো ছুরি সংগ্রহের পর নির্জন ও অন্ধকার স্থানে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে যায় এমআর। এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই এমআর তার হাতে থাকা ছুরি গলায় চালিয়ে হত্যা করে এসআরকে।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাউন্ডারির ভেতর পশ্চিম পাশের অন্ধকার স্থানে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে। অবশ্য সেখানে আগে থেকেই থাকা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে পুরো হত্যাকাণ্ডটি। পুলিশ সেই ফুটেজ সংগ্রহের পর বিশ্লেষণ শেষে এই হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি বিক্রয় প্রতিনিধি এরশাদ আলীকে হত্যাকারী মেডিকেল প্রতিনিধি আশিক বিল্লাহ সুমনকেও গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর পরই পুলিশ রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। একইসঙ্গে খুনিকেও ঘটনার পর পরই গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহসহ সবকিছু বিশ্লেষণ করেই পুলিশ নিশ্চিত হয়। গতকাল রবিবার বিকেলে থানার হলরুমে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এ সময় জেলা ও থানা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খুনের শিকার এরশাদ আলীর (৩২) বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার হালসার সুতাইল গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাফিকুল ইসলামের ছেলে। অপরদিকে খুনি এমআর আশিক বিল্লাহ সুমন (২৮) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ছনধরা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়– এই হত্যাকাণ্ডের সময় ধস্তাধস্তিতে খুনি আশিকের হাতে, চোখের পাশে রক্তাক্ত চোট লাগে। এমনকি তার পরণের কাপড়–চোপড়ও রক্তে ভিজে যায়। এই অবস্থায় মোটর সাইকেল ফেলে আশিক দ্রুত বাসায় গিয়ে গোসল করে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু তখন আশিক পুলিশকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল জব্বার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘খুনি আশিকের প্রাথমিক দেওয়া ভাষ্যানুযায়ী প্রথমে পুলিশ মনে করেছিল টাকার লেনদেন করার সময় ছিনতাইকারী দ্বারা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। পরবর্তীতে এমআর আশিকের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর সংগৃহীত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ধরা পড়ার বিষয়টি আশিকের সামনে আনা হলে পরে অকপটে স্বীকার করে নেন সে–ই এসআর এরশাদকে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দ্বায় স্বীকার করে দেওয়া বক্তব্য ১৬১ ধারায় পুলিশ প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করেছে। যাতে সে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা রুজুর পর গ্রেপ্তার খুনি আশিককে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।