টাকার লোভে ব্যবসায়ী আনোয়ারকে হত্যা

রোহিঙ্গা কর্মচারীর স্বীকারোক্তি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের লাশ নিখোঁজের এক মাস পর উদ্ধার করেছে তার খামারের রোহিঙ্গা কর্মচারীর স্বীকারোক্তি মতে। গত শুক্রবার রাতে তাকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে শনিবার রাত ১টার দিকে উপজেলা সদরের দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় খামারের পেছনে মাটিচাপা দেয়া গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। আনোয়ার হোসেন (৪০) ওই এলাকার মৃত আহমদ হোসেনের পুত্র। তিনি জাতীয় পার্টির লোহাগাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ঘটনার সাথে জড়িত আটক দুইজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তারা হলেন, স্থানীয় মো. ইদ্রিসের পুত্র মো. আসিফ (২৭) ও উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবদুস ছালামের পুত্র আনছার উল্লাহ (২৮)। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আরও এক রোহিঙ্গা কর্মচারী পলাতক রয়েছে। তাকেও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবিব জিতু, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ ও পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলামসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নিখোঁজ ছিলেন। বন্ধ ছিল তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও। পরদিন সকালে আনোয়ারের ভাই মোহাম্মদ সেলিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে নিখোঁজ আনোয়ারকে উদ্ধার করতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত ছিল। গত ২১ জানুয়ারি আনোয়ারের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন পেশায় গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় তার গরুর খামারে কাজ করতেন দুই রোহিঙ্গা যুবক। টাকার লোভে তারা গত ৩০ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে খামারের ভেতর আনোয়ারকে মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করলে জ্ঞান হারায়। এরপর তারা ছুরি দিয়ে গলা কেটে লাশ কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। ওই রাতেই খামারের পেছনে গর্ত করে আনোয়ারের লাশ মাটি চাপা দেয়। আনোয়ারের পকেটে থাকা ১৮ হাজার টাকা তারা দুইজনে ভাগ করে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে পালিয়ে যায়।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ব্যবসায়ী আনোয়ার হত্যার সাথে জড়িত এক রোহিঙ্গা কর্মচারীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ারকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে আনোয়ারের গরুর খামারের পেছন থেকে মাটিচাপা দেয়া তার গলিত লাশ উদ্ধার করেছি। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে আনোয়ার হোসেনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের লাশ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একইদিন রাত ৮টায় স্থানীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপহরণ নাকি আত্মগোপন?
পরবর্তী নিবন্ধসিইউএফএলের জ্বালানি তেল কর্ণফুলীতে, ক্ষতি পরিবেশের