ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে ঢাকা আবাহনী লিঃ। গতকাল কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টাইব্রেকারে ৪–২ গোলে বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়েছে আবাহনী। প্রথম কোয়ালিফায়ারে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হয় ১–১ সমতায়। যদিও ম্যাচে ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল খেলল আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচের রং আরও ফিকে হয়ে গেল আবাহনীর আসাদুজ্জামান বাবলুর লাল কার্ডে। দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারল না বসুন্ধরা কিংস। শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা ফেরাল আবাহনী। এরপর রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালেও উঠে গেল আকাশি–নীল জার্সিধারীরা। টাইব্রেকারে আবাহনীর জাফর ইকবালের শট আটকান আনিসুর রহমান জিকো। কিন্তু তিনি পরে পরাস্ত হন রাফায়েল আগুস্তো, এমেকা, সবুজ, মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে। টাইব্রেকারে জালের দেখা পান বসুন্ধরা কিংসের জোনাথন ফের্নান্দেস, শেখ মোরসালিন। রাব্বি হোসেন রাহুলের তৃতীয় শট ডান দিক ঝাঁপিয়ে আটকান মিতুল। এরপর দেসিয়েলের শট উড়ে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। কিংসের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা তিক্তই হল এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের জন্য।
প্রিমিয়ার লিগে গত ডিসেম্বরের দ্বৈরথে বসুন্ধরা কিংসকে এ মাঠেই হারিয়েছিল আবাহনী। যেটা ছিল তাদের বিপক্ষে আকাশি–নীল জার্সিধারীদের প্রথম জয়। সেই সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি করল মারুফুল হকের দল। ঘাড়ের ইনজুরির কারণে রক্ষণে বসুন্ধরা কিংস পায়নি কাজী তারিক রায়হানকে। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুয়ান এদুয়ার্দো লেসকানোকেও শুরুর একাদশে রাখার ঝুঁকি নেননি কোচ ভালেরি তিতে। তাতে কিংসের আক্রমণে ছিল না চেনা ধার। প্রচণ্ড গরমে দুই দলে খেলতে পারেনি নিজেদের স্বাভাবিক ফুটবল। ২৮ মিনিটে প্রথম কুলিং ব্রেকের আগ পর্যন্ত তেমন কোনো আক্রমণ, পাল্টা–আক্রমণ দেখা যায়নি। শুরু থেকে নিজেদের শক্তির জায়গা রক্ষণের চাদরে মুড়ে থাকে আবাহনী। ইনজুরি আক্রান্ত কিংস যা একটু চেষ্টা করেও তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ষোড়শ মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে কিংস। জোনাথন ফের্নান্দেসের ফ্রি কিকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দেসিয়েল এলিস দস সান্তোসের হেড আটকে আবাহনীর ত্রাতা গোলকিপার মিতুল মারমা। কুলিং ব্রেকের পর আক্রমণের ধার বাড়ায় কিংস। কিন্তু মিতুলের বিশ্বস্ত দেয়ালে চিড় ধরাতে পারেনি তারা। ৩৭ মিনিটে রাকিব হোসেনের আড়াআড়ি ক্রস গোলমুখে পান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। কিন্তু মিতুল ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা ফেরান। এরপর মজিবুর রহমান জনির কোনাকুনি শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৪২ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় আবাহনী। ফাহিমকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন বাবলু। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় পানির গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে নিজের উপরই হতাশা ঝাড়েন এই ডিফেন্ডার। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ায় রক্ষণের শক্তি বাড়াতে মিডফিল্ডার রবিউল হাসানকে তুলে ডিফেন্ডার শাকিল হোসেনকে নামান আবাহনী কোচ মারুফুল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দুরূহ কোণ থেকে জনির শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সমতার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধেই আবাহনীর সে স্বস্তি উবেও যায়। ৫৭ মিনিটে কাঙ্খিত গোল তুলে নেয় কিংস। ফের্নান্দেসের লং বল দুই ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ও শাকিলের কেউ ক্লিয়ার করতে পারেননি। তাদের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বল জনি ছুটে গিয়ে টোকায় জড়িয়ে দেন জালে। হতভম্ব মিতুল কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। চলতি আসরে এই প্রথম গোল হজম করল আবাহনী। ৮৪ মিনিটের পর ঘুরে দাঁড়ায় আবাহনী। রাফায়েল আগুস্তোর ফ্রি কিক পোস্টে লেগে ফেরার পর বদলি নামা আরমান ফয়সাল আকাশ বুক দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিখুঁত শটে খুঁজে নেন ঠিকানা। বাকি সময়ে কেউ গোল না পাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে প্রথম অর্ধের শুরুর দিকে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এমেকার শট পা দিয়ে আটকে কিংসের ত্রাতা গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। ১০১ মিনিটে বাম দিক দিয়ে আসা বসে মিরাজুল ইসলামের হেড ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে কিংসকে ম্যাচে রাখেন তিনি। নয় মিনিট পর সুযোগ কড়া নেড়েছিল মোরসালিনের সামনে। বক্সের মাঝামাঝি জায়গা বল পেয়েও পোস্টের বাইরে মারেন কিংসের এই ফরোয়ার্ড। টাইব্রেকারের কথা ভেবে ১১৮তম মিনিটে শ্রাবণকে তুলে অভিজ্ঞ জিকোকে নামান কিংস কোচ। এরপরই আবাহনীর হৃদয়ের শট অল্পের জন্য যায় বাইরে। টাইব্রেকারে জিকোর হাত ধরে আশা জাগানিয়া শুরু পেলেও কিংস পারেনি আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে বাধা দিতে।