চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আজ রোববার শুরু হচ্ছে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন–২০২৫। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সকল শিশু এবং প্রাক–প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে এক ডোজ টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হবে এই ক্যাম্পেইনে। স্কুল পর্যায়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এবং কমিউনিটি পর্যায়ে ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পেইন চলবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টাইফয়েডের টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত একটি টিকা। ছাত্রছাত্রীরা বিনা ভয়ে এটি গ্রহণ করতে পারবে।
জানা গেছে, নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় এবং উপজেলায় সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে টিকা দেয়া হবে। ক্যাম্পেইন চলাকালে নগর ও উপজেলায় ২৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৩৪২ জন শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এর মধ্যে নগরে ৮ লক্ষ ২৯ হাজার ৩০১ জন শিশুকে এবং ১৫ উপজেলায় ১৬ লক্ষ ৩২ হাজার ৪১ জন শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রায় ৫ কোটি শিশুর প্রতিজনকে অত্যন্ত কার্যকর ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের প্রবর্তক মোড়ের আইয়ুব বাচ্চু চত্বরে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের টিকা দেবে চসিক। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সিভিল সার্জনের ৫ নির্দেশনা : চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি গতকাল ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের যেন সকালে নাস্তা করে আসার নির্দেশনা দেয়া হয় এবং ঢিলেঢালা জামা পরে আসার জন্য বলা হয়। কোনো অবস্থাতেই যেন ক্লাসরুমে টিকা দেয়া না হয় তার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, টিকা দেয়ার জন্য আলাদা রুম বা বড় রুমে ঘেরাও দিয়ে ব্যবস্থা থাকা আবশ্যিক। ক্লাস রুমে টিকা দিলে ভীতিজনিত এইএফআইয়ের ঝুঁকি বাড়বে। প্রতি কেন্দ্রে অবশ্যই এনাফাইলেঙিস কীট ও উপজেলায় এইএফআই কিটের ফাইনাল চেক দিন। সকল চিকিৎসক ক্যাম্প সমন্ধে ও এইএফআই ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যেন অবহিত থাকেন।
এছাড়া কোনো স্কুল, মাদ্রাসা টিকা গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে অবিলম্বে সিএস অফিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অবহিত করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, টিসিভি ক্যাম্পেইন কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বশীল মেডিকেল অফিসারের সহায়তা নিবেন।
নগরে পাবে ৫ লক্ষ ৩১ হাজার স্কুল শিক্ষার্থী : চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের ১ হাজার ৫৪৬টি স্কুলে ও ৭৮৩টি আউটরিচ সাইডে টিকা দেয়া হবে। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ১৬৭ জন, স্কুল বহির্ভূত শিশু ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৮৪ জন। নগরে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় স্কুল ক্যাম্পেইনে ভ্যাকসিনেটর আছেন ৪২০ জন, কমিউনিটি ক্যাম্পেইনে ভ্যাকসিনেটর ২১৫ জন, স্কুল ও কমিউনিটি ক্যাম্পেইনে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন ৬২৫ জন করে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় স্কুল ও মাদ্রাসাসহ মোট ৬ হাজার ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭১ জন শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটিতে ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৭০ জনকে টিকা দেয়া হবে। জেলার ১৫ উপজেলার ২০০ ইউনিয়নের ৬০০ ওয়ার্ডে ১ হাজার ২১৫ জন প্রশিক্ষিত কর্মী, ১ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৬০০ জন প্রথম সারির পরিদর্শক এবং ৬০ জন দ্বিতীয় সারির পরিদর্শক টিকাদান ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত থাকবেন।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, টাইফয়েড প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা গ্রহণ। তাই ক্যাম্পেইন চলাকালে নগরের প্রতিটি শিশু যেন বিনামূল্যে এই টিকা গ্রহণ করে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অবশ্য সচেতন অনেক অভিভাবক ব্যক্তিগতভাবে তাদের শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দিয়ে থাকেন। ব্যক্তিগতভাবে কিনে এই ভ্যাকসিন দিতে গেলে ১৪শত টাকা খরচ হয়। কিন্তু কাম্পেইনে শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে বিনামূল্যে।
রেজিস্ট্রেশন না করলেও দেয়া যাবে টিকা : বিনামূল্যে এ টিকা পেতে প্রয়োজন জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য (১৭ ডিজিট) দিয়ে ওয়েবসাইটে (িি.িাধীবঢ়র.মড়া.নফ) নিবন্ধন করা। অবশ্য যারা নিবন্ধন করবে না তারাও টিকা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
টাইফয়েড টিকা দেয়া কেন প্রয়োজন : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। দ্যা গ্লোবাল গার্ডেন অফ ডিজিজের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং ৮ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে, যার ৬৮ শতাংশই শিশু।
মূলত দূষিত পানি, খাবারের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাবে টাইফয়েড ছড়ায়। টিকা দিলে টাইফয়েড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক এক স্বাস্থ্যঝুঁকি আর উদ্বেগের নাম টাইফয়েড। টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় প্রচলিত যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমান টাইফয়েড নিরাময়ে কাজ করছে না। ফলে ভয়াবহ ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করলে এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ কমে আসবে।