সাবমেরিন টাইটান নিখোঁজ, ধ্বংসের খবর তখনও মেলেনি–এমন সময়ে সবাই যখন তাদের জন্য প্রার্থনা করছেন, সেই সময়েই এক দল জুয়াড়ি লাখ লাখ ডলারের বাজি ধরেছেন। বিষয়, আরোহীরা জীবিত ফিরবেন কি না। আর একে ডিজিটাল অর্থের নৈরাজ্যকর বা ডিস্টোপিয়ান ব্যবহার আখ্যা দিয়েছেন অনলাইন পর্যালোচকরা। মার্কিন সংবাদ সাময়িকী ‘মাদার জোনস’–এর প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবারের পর থেকে ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্ম পলিমার্কেটে এই সাবমেরিনের ভাগ্য নিয়ে সব মিলিয়ে অন্তত তিন লাখ ডলারের বাজি চলেছে। সাইটে থাকা বাজিকররা ক্রিপ্টো ব্যবহার করে ঘটনাটির ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন শেয়ার বেচাকেনা করেছেন। আর সঠিক অনুমানের জন্য শেয়ারপ্রতি এক ডলার করে পেয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। খবর বিডিনিউজের।
এই বাজারে, সাবমেরিন উদ্ধারের প্রয়োজন না পড়লে বা শারীরিকভাবে পুনরুদ্ধার করা গেলে তা খুঁজে পাওয়া গেছে হিসেবে বিবেচিত হবে। —লেখা ছিল বাজির পেইজে। সাবমেরিনের অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া গেলেও এর মধ্যে যদি যাত্রী কেবিন না থাকে, তবে সেটি হ্যাঁ–সূচক বলে বিবেচিত হবে না। রিক নামে পরিচয় দেওয়া এক ব্যবহারকারী মাদার জোনসকে বলেন, বাজি থেকে তার আয় হয়েছে সোয়া তিন হাজার ডলার। তার যুক্তি, এই বাজি অনৈতিক নয়। কারণ শেয়ার বাজারের বাজিতেও যে কোম্পানির ওপর বাজি ধরা হয় তার ওপর বাজির প্রভাব পড়ে, এখানে সে প্রভাবও পড়ছে না। আমার কথা হলো, এই বাজার গোড়া থেকেই অনৈতিক। পুঁজিবাদের দুনিয়ায় কোনো পণ্যই নৈতিক নয়। —বলেন রিক।
অন্যরা অবশ্য তার এই কথায় দ্ব্যার্থহীন সমর্থন দিতে পারেননি। এই ধরনের বাজির সমালোচনা করেও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা হাজার হাজার লাইক পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ড। এটা আসলে বিকার ছাড়া আর কিছু নয়। লেখেন এক মন্তব্যকারী। কারও মৃত্যুর পক্ষে–বিপক্ষে বাজি ধরে অর্থ আয় স্রেফ মানসিক বিকার। তবে, আত্মপক্ষ সমর্থন করে পলিমার্কেট যুক্তি দেখায়, তারা এই সাবমেরিন উদ্ধারের সম্ভাবনা যাচাইয়ে একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
আক্রান্ত পরিবারগুলো পলিমার্কেটে থাকলে, তারাও সাবমেরিন পুনরুদ্ধারের বাস্তবতা যাচাইয়ের নিরপেক্ষ উপায় হিসেবে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারতেন। —প্রযুক্তি সাইট গিজমডোকে এক ইমেইল বার্তায় বলেছে কোম্পানিটি। এটা সাড়া জাগানো মানবিক মিডিয়া কভারেজের চেয়েও কাজের সেবা। কারণ, আমাদের এই বাজার অন্তত সত্যিকারের সম্ভাবনাগুলো বোঝে।
বাজিকররা খেলাধূলা থেকে শুরু করে সেঙ টেপ সবকিছুর পক্ষেই বাজি ধরেন। তবে, রুচিবোধ নিয়ে এই সেক্টরে কয়েকটি মানদণ্ড রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। জুয়া পরামর্শক সাইট বেটিং গডস বলছে, বেশিরভাগ বাজি সাইটই ব্রিটেনের রাণি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু নিয়ে বাজি ধরতে রাজী হয়নি।
শীর্ষ বাজিকররা রাণির মৃত্যু নিয়ে বাজি ধরবে না কারণ এটি তাদের গ্রাহকদের চটিয়ে দেবে। এমনকি তাদের মধ্যে রাজ পরিবার থাকা না থাকা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও। তবে বেশিরভাগ মানুষ খেলাধুলার মতো বিষয়াদি নিয়ে বাজি ধরতে পছন্দ করেন। —এক প্রতিবেদনে লিখেছে সাইটটি। বাজিকররা কেন রাণির মৃত্যু নিয়ে বাজিতে রাজি হয়নি এ নিয়ে শীর্ষ বাজি সাইটগুলোর মুখপাত্র বলেন, কী নিয়ে বাজি ধরা যায় আর যায় না সেই সীমারেখাটি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।