টাইগারপাসে সড়ক অবরোধ পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ

কোটাবিরোধী আন্দোলন ।।  ১৫ শিক্ষার্থী আহত, পরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ ।। বহদ্দারহাট, জিইসি, বায়েজিদ, চকবাজার সড়কে ভোগান্তি ।। রাত ৯টায় চবিতে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১২ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করার এক দফা দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর নগরীর টাইগার পাস এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে চট্টগ্রামখাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল থেকে প্রায় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের কারণে বহদ্দারহাট, জিইসি, বায়েজিদ, চকবাজার অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে নগরীর বটতলী রেলস্টেশনে অবস্থান করেন তারা।

দুপুর আড়াইটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কথা ছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে তারা বিকাল ৪টার দিকে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন।

এরপর তারা মিছিল নিয়ে নগরের টাইগারপাস সড়ক অবরোধের জন্য এগিয়ে আসেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মিছিলের পেছনে এবং সামনে থেকে তাদের বাধা দেন।

বিকাল ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ তাদের ঘেরাও করে রাখলেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের হাতাহাতি হয়। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে টাইগারপাস থেকে দুই নম্বর গেটের দিকে রওনা হন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে থাকে। পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহত হন একজন নারী পুলিশ সদস্যও। একজন মেয়ে শিক্ষার্থী রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া তালাত নামে আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে একা পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা তাদের কোটা বাতিলের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আমাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে এক চুলও নড়বো না। প্রয়োজন হলে বুকে গুলি চালান। আমরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়ে মরে যেতেও প্রস্তুত। এরপর নগরীর ২নং গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। দুই নম্বর গেটে আস্তে আস্তে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন। তারা ওই সময় কোটাবিরোধী এবং পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদেরকে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা সড়ক থেকে না সরে ম্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আজ সারারাত আমরা এখানেই অবস্থান করবো। আজ থেকে আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করবো। এরপর রাত ৮টার দিকে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা ষোলশহর স্টেশনে চলে যান।

রাত ৯টায় আন্দোলন কর্মসূচি শেষ করে ষোলশহর থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আজকে এক নম্বর গেটে শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমাদের কর্মসূচি ছিল শহরে। কিন্তু শহরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার সময় অন্যায়ভাবে পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে। যার ফলে আমরা এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামখাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা বর্ষণে পানির নিচে কক্সবাজার উন্নয়নের পরও ভোগান্তি
পরবর্তী নিবন্ধকোটাহীন ৫ বছরে প্রভাব কী? কাদের জানালেন পিছিয়েছে নারীরা