টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭–১৯৩১)। একাধারে উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী এবং উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। তাঁর আবিষ্কারেই প্রথম আলোকিত হয়েছিল গোটা পৃথিবী। বৈদ্যুতিক বাতি, ফনোগ্রাফ, মাইক্রোফোন, ভিডিও ক্যামেরা, ফ্লুরোস্কোপসহ আরো হাজারো আবিষ্কারের জনক তিনি।
টমাস ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও, মিলানে জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের পারিবারিক পদবি ‘এডিসন’। এডিসন স্কুলে ভর্তি হলেন। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু স্কুলের গণ্ডিবাঁধা পড়াশুনা তাঁর নিকট একঘেঁয়েমি মনে হত। পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ নেই, শিক্ষকদের অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হতেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। অল্পদিনেই তাঁকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। সাথে দেয়া হয় তার মাকে চিঠি। তিনি মা এবং গৃহশিক্ষকের কাছেই তিনি শিক্ষা অর্জন করেন। শৈশব থেকেই তার মাঝে জাগে আবিষ্কারের নেশা। তার জন্য চাই অর্থের যোগান। তাই মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কাজ করবেন। কাজ নিলেন খবরের কাগজ বিক্রির। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি বনে যান পত্রিকার সম্পাদক। ছাপাখানা কিনে নিজেই খবর সংগ্রহ করে, পত্রিকার সম্পাদনা করে বিক্রি করতেন। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এডিসনের ১৯ বছর বয়সে কর্মচারী হিসেবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে যোগ দেন। তিনি এসোসিয়েটেড প্রেস ব্যুরো সংবাদ সংস্থাতে কাজ করেছেন। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এক রাতে, তিনি ফ্লোরে সালফিউরিক অ্যাসিড ছিটিয়ে একটি সীসা–অ্যাসিড ব্যাটারি নিয়ে কাজ করছিলেন। যার কারণে এখান থেকে তিনি চাকরিচ্যুত হন। তিনি ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়। কয়েক বছরের মধ্যেই এডিসন প্রায় ১০০টির বেশি নতুন উদ্ভাবন করেন। তিনি ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নতুন কারখানা স্থাপন করলেন মেনলো পার্কে। এখানে একদিকে তাঁর গবেষণাগার অন্যদিকে কারখানা। এই মেনলো পার্কে বিজ্ঞানী এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উদ্ভাবন করলেন কিনেটোগ্রাফ, যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এডিসন আবিষ্কার করলেন কিনেটোফো যা সংযুক্ত করা হয় সিনেমার ক্যামেরার সাথে। এরই ফলে তৈরি হল সবাক চিত্র। এই পরিশ্রমী বিজ্ঞানী অবশেষে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।