লোহাগাড়ার আমিরাবাদে টংকাবতী খালের উপর নির্মিত নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর আমিরাবাদ পূর্ব মুহুরিপাড়া এলাকায় প্রায় অর্ধযুগ আগে এলাকাবাসীর অর্থায়নে এই সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়। আর বর্ষায় পানির স্রোতে ভেঙে যায়।
জানা যায়, এলাকাবাসীর অর্থায়নে টংকাবতী খালের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মুহুরি পাড়া, রাহাত আলী পাড়া, ঘোনা পাড়া, ছৈয়দ পাড়া, পশ্চিম মুহুরি পাড়া, আমির খান পাড়া, চৌধুরি পাড়া ও বাঁশখালিয়া পাড়াসহ আশেপাশের আরও কয়েকটি পাড়ার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি মহিলা মাদরাসা, উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়, মল্লিক ছোয়াং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীরা আসা–যাওয়া করে। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এই পর্যন্ত এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে পায়ে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা সম্ভব হয় না। এছাড়া উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও দুর্ভোগ নিরসনের জন্য ব্রিজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, টংকাবতী খালের উপর এলাকাবাসীর অর্থায়নে প্রায় ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। গত বর্ষায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি পানির ঢলে লোহার পিলার দুর্বল হওয়ায় সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এছাড়া পাটাতনের বাঁশ ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই সময় এলাকাবাসী টংকাবতী খালের ওই স্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান জানান, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল এখানকার মানুষ। গ্রামবাসীর অর্থায়নে প্রতিবছরই একটি বাঁশের সাঁকো সংস্কার করে পারাপার হয়ে আসছি। কিন্তু খালে পানি বৃদ্ধি পেলে পুনরায় ভেঙে যায়। স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। আমাদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক। স্থানীয় আয়েশা বেগম জানান, শুষ্ক মৌসুমে সমস্যা কম হলেও বর্ষায় দুর্ভোগে পড়তে হয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। অনেকে সেতু করার আশ্বাস দিলেও কেউ বাস্তবায়ন করেনি। দ্রুত এটি নির্বিঘ্নে চলাচল উপযোগী করা প্রয়োজন।
শিক্ষার্থী আমিনুল হক জানায়, সারাদেশ উন্নত কিন্তু আমরা অবহেলিত। আমাদের যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখন তো চলা যায়। তবে বর্ষা এলে কী যে কষ্ট হয় তা আমরাই জানি। সাঁকোটি স্থায়ী সেতুতে রূপান্তর করা হলে এই এলাকার অনেক মানুষের উপকার হবে। লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ইফরাদ বিন মুনীর জানান, সাঁকোটি বর্তমানে এলজিইডির কোনো প্রকল্পের ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। ওই স্থানে সেতুর প্রয়োজনীয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন অতি দ্রুত নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর প্রেরণ করবো। যাতে অবিলম্বে কোনো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ওই স্থানে স্থায়ী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।