বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ অবকাঠামোগতভাবে চরম সংকটে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবন, শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষক ও জনবল স্বল্পতায় প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এ কলেজে। সর্বশেষ বিজ্ঞান ভবন বন্ধ হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বোয়ালখালীর স্যার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯৩৯ সরকারি কলেজের সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ ভবন – প্রতিনিধি কলেজটির একাধিক ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ইতিমধ্যে দুইটি পুরনো ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তবুও শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই জরাজীর্ণ ভবনের কয়েকটি কক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের ছাদ
থেকে পানি পড়ে, বিমে ফাটল, খসে পড়া প্লাস্টার যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে। ভবন সংকটের কারণে কলেজের
লাইব্রেরির মূল্যবান দলিল ও বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রসায়ন বিভাগ ও আইসিটি ল্যাবের যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বহু বছর ধরে অচল হয়ে আছে কলেজের ছাত্রাবাসগুলো। শিক্ষকদের জন্য নেই আবাসিক সুবিধা। আশুতোষ সীমানাপ্রাচীর না থাকায় কলেজ ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকায় বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত
বেড়েছে, দখল ও চুরির ঘটনাও ঘটছে। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সসহ একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণি, ডিগ্রি (বিবিএস, বিএসসি, বিএ, বিএসএস) ও অনার্স কোর্সে মোট ৫,২৩৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে ছাত্রী ২,৬৯৬ জন এবং ছাত্র ২,৫৪১ জন। দ্বিতল বিশিষ্ট জোড়াতালি দেওয়া দুইটি ভবনে সব শ্রেণির পাঠদান ও পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। ফলে এক শ্রেণির পরীক্ষা চললে অন্য শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। ২০১৯ সালে কলেজের জন্য একটি ছয়তলা একাডেমিক ভবন বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত সেটি দৃশ্যমান হয়নি। মাত্র ১ কোটি ৯ লাখ টাকার কাজ করে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় ভবনের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় ৩০০টি শিক্ষা ভবনের কাজ সম্পন্ন হলেও একমাত্র বোয়ালখালী স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের টেন্ডার বাতিল হয়ে যায় ।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘শিক্ষার্থী সংকুলান না হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনের কিছু কক্ষ ব্যবহার করতে হচ্ছে। কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ৮টি পদ শূন্য রয়েছে। আইসিটি বিভাগে মাত্র একটি পদ থাকলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় বর্তমানে আইসিটির পাঠদান বন্ধ।‘ তিনি আরও বলেন, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির মোট ১৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন । ১৯.৪ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির রক্ষণাবেক্ষণ এই জনবল দিয়ে প্রায় অসম্ভব। জরুরি ভিত্তিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রয়োজন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। লাইব্রেরি প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জানান, কলেজের লাইব্রেরিতে ১৩ হাজার ৪৬৯টি মূল্যবান বই রয়েছে। ছাদ থেকে পানি পড়ায় অনেক বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অনেক বই উইপোকায় আক্রান্ত । লাইব্রেরিয়ান না থাকায় নিজেই এবং একজন এমএলএসএস দিয়ে কোনো রকমে দেখভাল করছি। দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা












