রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ইতিপূর্বে প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন অনেকে। কিন্তু এরপরও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রোধ করা যাচ্ছে না। উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডেই গেল কয়েক বছরের মধ্যেই অন্তত ১০টি পাহাড় বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এসব পাহাড়ের মাটি শুষ্ক মৌসুমে চলে যায় আশেপাশের ইটভাটায়। আবার সারাবছর ধরে পাহাড়ের মাটিতে চলে পুকুর–ডোবা ভরাটসহ নানা পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম। একইভাবে উপজেলার চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম, পৌরসভার ইছাখালী, কোদালা, ইসলামপুর, পোমরা, রাজানগর, পদুয়া, বেতাগীসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই নিয়মিত পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে।
এই ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ে যারা থাকেন, তারা সবাই নিম্ন আয়ের। তাদের সরিয়ে নিলেও তারা দখল ছাড়ে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আমরা মাসিক সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’ সম্প্রতি দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডটিতে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে দেখা যায়, ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর, গলাচিপা, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামে অন্তত কয়েক শতাধিক পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে পাহাড়ের ঢালে, পাদদেশে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায়। যেকোনসময় পাহাড় ধসে প্রাণহানিসহ ভয়াবহ পরিস্থিতি নেমে আসতে পারে এসব বাসিন্দারের জীবনে। পাহাড় কাটা রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় খেকোদের, অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির।
ওই ওয়ার্ডের সোনারগাঁও নতুনপাড়া গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকাটিতে শতাধিক পরিবারের বসবাস। সবগুলো পরিবার বসবাস করছে খাড়া পাহাড়ের ঢালে। কিছু পরিবার ওই পাহাড়ের উপরই বসবাস করেন। বৃষ্টিতে পাহাড়গুলোতে মাটি ধসে পড়ার চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যেই রাতের আঁধারে পাহাড়গুলো কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোনারগাঁও নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সৈয়দ বলেন, বনবিভাগের মালিকানাধীন এই এলাকায় দখলস্বত্বের ভিত্তিতে প্রায় ১০০টি পরিবার বসবাস করেন অন্তত অর্ধ শত বছর ধরে। ঝুঁকি আছে তারপরও নিম্ন আয়ের হওয়ায় কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকায় সবাই থাকছেন বলে তিনি জানান।
এসব বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম রফু বলেন, ‘আমার পুরো ওয়ার্ডই পাহাড়ি অঞ্চলের। তার অধিকাংশ জায়গা বনবিভাগের। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ করতে এবং পাহাড় না কাটতে নিয়মিত আমি বলে আসছি। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরেও এই ব্যাপারে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটের কারণে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
এই ব্যাপারে বনবিভাগের স্থানীয় বিটের ফরেস্টার মো. মাহবুব বলেন, ‘খবর পেলেই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ করি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’