পাহাড়ের শান্ত পরিবেশে, গাছের ছায়ায় বা নদীর তীরে একটি সুরেলা আওয়াজ শোনা যায়, যা সাধারণত ঝিঁঝিঁ পোকা তৈরি করে থাকে। গ্রীষ্মের গরমে তার সুরে এক অদ্ভুত মাধুর্য খুঁজে পাওয়া যায়, যেন পাহাড়ের প্রতিটি কোণ থেকে তার সঙ্গীত ভেসে আসছে। ছোট্ট এই প্রাণীটির নাম হয়তো অনেকের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়, কিন্তু তার অস্তিত্ব এবং গান অনেক কিছু শেখায় আমাদের জীবনে। এটি শুধু একটি সঙ্গীতজ্ঞ নয়, বরং একটি জীবনের পাঠশালা। ঝিঁঝিঁ পোকা আমাদের শিখায় জীবনের নানা দিক, যার মধ্যে সহনশীলতা, সংগ্রাম, একাকীত্বের মধ্যে শান্তি এবং পরিবেশের প্রতি যত্নের মতো গুণাবলী।
ঝিঁঝিঁ পোকা সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে গাছপালায়, মাঠে বা পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু তার সুর যে আকাশের মতো বিস্তৃত হয়ে ওঠে, তা আসলেই বিস্ময়কর। যখন সে গান গায়, তার সুর যেন পুরো পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যায়। সুরটি এতটাই মধুর যে, মনে হয় যেন প্রকৃতি নিজেই তার কণ্ঠে সুর তুলেছে। তবে, এই সুরের পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ পথচলা, সংগ্রাম এবং সহনশীলতা। ঝিঁঝিঁ পোকা নিজের জীবনকে এমনভাবে সাজিয়েছে, যেন সে তার সুরের মাধ্যমে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবনদর্শন শিখিয়ে যায়।
ঝিঁঝিঁ পোকা আমাদের শেখায় সহনশীলতার গুণ। পাহাড়ে অথবা গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে থাকতে সে তার গান তৈরি করে, কখনো তাড়াহুড়ো করে না, অপেক্ষা করে। এই অপেক্ষা তার নিজের পথচলার একটি অংশ। প্রতিদিনের জীবনে আমাদেরও অনেক সময় ধৈর্য ধরতে হয়। জীবন যখন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, তখন আমাদেরও ঝিঁঝিঁ পোকা থেকে শিখতে হবে দ্রুত সাফল্য অর্জন না করে ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে কাজ করা উচিত। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আমাদেরও জীবনের সুর একদিন বাজবে।
ঝিঁঝিঁ পোকা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় সংগ্রাম এবং আত্মবিশ্বাসের মূল্য। সে জানে, নিজের সুর বের করতে হলে তাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়, কখনো গাছের নিচে, কখনো মাঠের মধ্যে আবার কখনো পাহাড়ের চূড়ায়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে গিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকা কখনো হতাশ হয় না, বরং সে তার গান গেয়ে আমাদের শেখায় যে, আমাদেরও কখনো হাল ছাড়লে চলবে না। জীবনে প্রতিটি সমস্যার সমাধান সংগ্রামের মধ্যে নিহিত থাকে, আর এই সংগ্রামই আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। ঝিঁঝিঁ পোকা আমাদের দেখিয়ে দেয়, জীবন যত কঠিন হোক না কেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করলে সবকিছুই সম্ভব।
এছাড়া, একাকীত্বের মধ্যে শান্তির খোঁজও ঝিঁঝিঁ পোকা আমাদের শেখায়। তার জীবন পাহাড়ে সে একা, তবে তার গান সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এর মাধ্যমে সে আমাদের বোঝায় যে, একাকীত্বের সময় শূন্যতা অনুভব করা কোনো বাধ্যবাধকতা নয়। বরং একাকী সময়ে শান্তি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। ঝিঁঝিঁ পোকা তার নিজের সুরে পৃথিবীকে একসঙ্গে এনে শান্তির বার্তা দেয়। যখন আমরা একা থাকি, তখন আমাদের উচিত নিজের ভেতরের শান্তি খোঁজা এবং এই সময়টিকে উপভোগ করা। একাকী সময়কে অবসাদ বা বিষণ্নতা হিসেবে না দেখে, বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
ঝিঁঝিঁ পোকা আরও আমাদের শেখায় পরিবেশের গুরুত্ব। পাহাড়ে, বনে বা যেখানেই সে থাকে, তার স্থানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার গান যে পুরো পরিবেশের সঙ্গে এক হয়ে যায়, এটি পরিবেশের ভারসাম্যের একটি সুন্দর প্রতীক। প্রকৃতির প্রতি যত্ন এবং সচেতনতা আমাদের জীবনে অপরিহার্য। যখন আমরা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যত্নশীল হব, তখন আমাদের চারপাশের পরিবেশও সুন্দর থাকবে।
ঝিঁঝিঁ পোকা আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে চললে এবং তার উপকারিতা বোঝা গেলে, জীবন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।
ঝিঁঝিঁ পোকা তার ছোট জীবনে যে বড় বড় পাঠ শিখিয়ে যায়, তা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। তার সুরের মধ্যে যেমন প্রকৃতির গান, সংগ্রামের বার্তা এবং শান্তির অভিপ্রায়, তেমনি আমাদের জীবনেও যদি সহনশীলতা, আত্মবিশ্বাস, একাকীত্বের মধ্যে শান্তি এবং পরিবেশের প্রতি যত্ন বজায় রাখা যায়, তবে আমাদের জীবনও সফল ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের জীবনে ঝিঁঝিঁ পোকা যেমন পাহাড়ের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধু, তেমনি আমাদেরও জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক হতে পারে।