জয় পুতুল ও ববিসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সিআরআইয়ের তহবিলের ১৫ কোটি ৬৮ লাখ আত্মসাৎ

| মঙ্গলবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

নিবন্ধন ছাড়াই’ কর অব্যাহতি নেওয়া, কর অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে তহবিল ‘আত্মসাৎ’ এবং বিপুল অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

মামলায় সিআরআই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাইস চেয়ারম্যান ও শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ট্রাস্টি এবং শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সিআরআইয়ের অনুকূলে জমা করা তহবিলের ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘নিবন্ধন না থাকার পরও’ সিআরআই কর অব্যাহতি সুবিধা নিয়েছে, তাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করে ‘মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

দুদকের সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকাএ মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক এনবিআর সদস্য রওশন আরা আক্তার, সিআরআইয়ের এঙিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামসকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।

মামলার এজাহারে দুদক বলেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন না থাকলেও সিআরআই ২৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪১৫ থেকে ২০২৩২৪ অর্থবছরে সিআরআই ১০০ কোটি ৩১ লাখ টাকার আয় দেখালেও ২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ব্যয়ের কোনো ‘বৈধ প্রমাণ পাওয়া যায়নি’। ব্যয়ের ঘাটতি বিশ্লেষণ করে দুদক বলছে, প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা থাকার কথা থাকলেও ব্যাংক হিসাবে ৫৫ কোটি ১১ লাখ টাকা পাওয়া যায়। অবশিষ্ট ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদক বলছে, নিবন্ধনবিহীন অবস্থায় ২০১৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কর অব্যাহতি সুবিধা নিতে আবেদন করেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি নসরুল হামিদ। তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সদস্য রওশন আরা আক্তার ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই আবেদন অনুমোদন করেন। তাদের স্বাক্ষরে এসআরও নং ৮৩আইন/২০১৯ অনুযায়ী কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়, যা আয়কর অধ্যাদেশের ‘বিধান লঙ্ঘন’। অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, সিআরআই ওই সুবিধার সুযোগে ২০২০২১ অর্থবছরে ৯ লাখ ৪৭ হাজার, ২০২১২২ সালে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ও ২০২২২৩ সালে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আয়কর না দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছে, যার মোট অঙ্ক ৩৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দুদক বলছে, এসব হিসাবে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা এবং ১৯১ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ৪৩৯ কোটি টাকার ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেন হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২এর ৪() ও ৪() ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭এর ৫() ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২এর ৪() ও ৪() ধারায় অভিযোগ এনেছে দুদক। মামলার এজাহারে ঘটনার সময়কাল বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীর পৃথক স্থানে অজ্ঞাত দুই লাশ
পরবর্তী নিবন্ধখাজা রোডে আগুনে পুড়ল পাঁচ দোকান