জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সন্তান। কবি, নাট্যকার এবং অনুবাদক হিসেবে খ্যাতিমান। গান রচনা, স্বরলিপি তৈরি এবং ছবি আঁকায়ও পারদর্শী ছিলেন। উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে তিনি সম্মানিত।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৪৯ সালের ৪ঠা মে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে। তিনিই ছিলেন কবিগুরুর ‘নতুন দাদা’। রবীঠাকুরের সাহিত্য জীবন গঠনে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিশেষ অবদান ছিল। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জ্যোতিরিন্দ্র কলকাতা কলেজ থেকে প্রবেশিকা পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে এফ.এ পড়াকালীন পারিবারিক ‘জোড়াসাঁকো থিয়েটার’ গড়ে তোলার সময় কলেজ ছেড়ে দেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ‘ব্রাহ্মধর্ম বোধিনীসভা’, ‘আদি ব্রাহ্ম সমাজ সঙ্গীত বিদ্যালয়’, ‘সঞ্জীবনী সভা’, ‘সারস্বত সমাজ’ প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘পুরুবিক্রম’ নামে জাতীয়তাবাদী চেতনার ভাবোদ্দীপক নাটক রচনা ও অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর নাট্যকার জীবনের সূত্রপাত। এটি ছাড়াও জোতিরিন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘কিঞ্চিৎ জলযোগ’, ‘সরোজিনী’, ‘হঠাৎ নবাব’, ‘অলীক বাবু’, প্রভৃতি। ‘শকুন্তলা’, ‘রত্নাবলী’, ‘উত্তম চরিত’, ‘মালতী মাধব’, ‘মৃচ্ছকটিক’ ইত্যাদি সংস্কৃত নাটকের অনুবাদও করেছিলেন তিনি। তরুণ বয়সে সেতার বাজানো ও ছবি আঁকার পাশাপাশি ফরাসি ও মারাঠী ভাষা শিখেছিলেন। মারাঠী থেকে ‘ঝাঁসির রাণী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য অনুবাদকর্ম। ইংরেজি ও ফারসি থেকেও তিনি বহু অনুবাদ করেছেন।
তাঁর রচিত ‘স্বরলিপি গীতিমালা’ বাংলা সঙ্গীত স্বরলিপির একখানা আকরগ্রন্থ। মানুষের প্রতিকৃতি আঁকায় তাঁর অদ্ভুত দখল ছিল। ছিলেন উদার ও সংস্কৃতিমনা। নারী স্বাধীনতা সমর্থক জ্যোতিরিন্দ্র সমাজে প্রচলিত নানা সংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল স্বদেশপ্রেম। ১৯২৫ সালের ৪ঠা মার্চ রাচীতে তাঁর মৃত্যু হয়।