আবুল হাছান সহিদ। দীর্ঘ ২২ বছর ছিলেন সৌদি আরব। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আসেন দেশে। তিনি সৌদি আরবে আদনান সাঈদ আল সাদী নামের এক কফিলের (নিয়োগকর্তা) অধীনে হোটেল ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা কফিলের নামে একাউন্ট খুলে ব্যাংকে জমা রাখতেন। দেশে এসে ছুটি শেষে সৌদি ফেরার প্রস্তুতি নিলে জানতে পারেন তার ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তার ভিসাটিতে সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ সীলমোহর দেওয়া। এতে সহিদ বুঝতে পারেন কফিল উপার্জনের সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিতে তার ভিসা বাতিল করে দিয়েছেন। এরপর তিনি দেশে বেকার হয়ে একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। নিজের সবকিছু ব্যয় করার পর স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করছিলেন।
এদিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নগরীর হাজারি গলিতে স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করতে এসে সহিদ শিকার হন আরেক প্রতারণার। হাজারি গলিতে জ্বীনের বাদশার খপ্পরে পড়ে গত ৬ মাসে খুঁইয়েছেন ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি কোতোয়ালী থানার দ্বারস্থ হন। বাদী হয়ে করেন মামলা। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানা পুলিশ তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হল- মো. আবদুল মান্নান (৫৮), মো. জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩) এবং আবু তৈয়ব (৫৮)। তাদের গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এদিকে তিন আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাজারি গলিতে জ্বীনের বাদশা সেজে সৌদি ফেরত এ প্রবাসীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগী থানায় এজাহার দিলে আমরা মামলা রেকর্ড করেছি। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিশ্বাসভঙ্গ করত: প্রতারণাপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকি প্রদান করার অভিযোগ করা হয় এজাহারে। ইতোমধ্যে আমরা তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। ওসি বলেন, গ্রেপ্তার তিন প্রতারকের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছি। আদালতের নির্দেশনা পেলে আসামিদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সৌদি ফেরত প্রবাসী আবুল হাছান সহিদ হাজারী গলির একটি স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে দোকানের কর্মচারী আবু তৈয়বের সাথে দেখা হয়। আবু তৈয়ব স্বর্ণ বিক্রির কারণ জিজ্ঞাসা করলে সহিদ তার কফিল দ্বারা প্রতারণার বিষয়টি বলেন। পরবর্তীতে আবু তৈয়ব বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে গত ২০ মার্চ তাকে লালদীঘি পাড়ের হোটেল আল ফাতাহ’র ৩য় ৩লায় নিয়ে নিয়ে মূল ‘জ্বীনের বাদশা’ মো. আবদুল মান্নানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এসময় আবদুল মান্নান নিজেকে পীর এবং তিনি জ্বীন পালেন বলে জানায়। এসময় আবদুল মান্নান আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে জ্বীনের মাধ্যমে সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসবেন এবং তার সঞ্চিত পুরো টাকা সাদী ফেরৎ দিয়ে যাবেন বলে সহিদকে আশ্বস্ত করে। এরপর থেকে বিভিন্ন কায়দায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ডিম, চাল, জ্বিনকাটা মেডিসিন, শুকরের পিত্তথলি, মুক্তার মগজ, সাদা কাপড়, কালো কাপড়, লাউ, কবুতর, মেজবান খাওয়ানোর কথা বলে বিকাশের মাধ্যমের দফায় দফায় ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে দেয়। আবদুল মান্নান এসব টাকা জোবাইর হোসাইন রিজভীর বিকাশ নম্বরে নিত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।