আমাদের গ্রামের দক্ষিণপাড়ার আলী হোসেন দশম শ্রেণির ছাত্র। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী না। কিন্তু খেলাধুলায় উৎসাহী, বিশেষ করে দৌড়ে বেশ ভালো। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তার প্রথম হতেই হবে। এমনও রেকর্ড আছে সে ঝড়ের গতিতে দৌড়াতে গিয়ে অজ্ঞানও হয়ে যায়। এলাকার মানুষজন তাকে আলী নামে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একদিনের ঘটনা,,, আলীদের বাড়ির উঠানে অনেক লোক একসঙ্গে জড়ো হয়ে আছে আর চিল্লাচিল্লিও জমে উঠেছে।
আলী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর দাঁতের দু‘পাটি একসঙ্গে লেগে আছে।
পাড়ার এক চাচী আলীর বড়বোনকে ডেকে বলল, দুই টাকা বা পাঁচ টাকার একটা কয়েন নিয়ে আয় তো আমেনা।
আমেনা দৌড়ে ঘরের ভেতর থেকে খোঁজাখুঁজি করে একটা কয়েন এনে ঐ চাচীর হাতে দিলো। এবার চাচী কয়েনটা দিয়ে অনেক কষ্টে দাঁতের খিল ধরা সারালেন।
এদিকে আলী দু‘হাত ঝেড়ে উঠে বসলো আর দু‘চোখ বড় বড় করে সবার দিকে একটা ভয়ংকর ভাব নিয়ে তাকালো।
কতক পিচ্চি ছেলেমেয়ে ‘ও মাগো‘ বলে ভয়ে দৌড় দিলো।
আলী গম্ভীর কণ্ঠে বলল, কে রে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করলি? তার আজ ঘাড় মটকাবো।
অধিকাংশই বলে উঠল, আলীর উপর হয়তো জ্বিন আছর করেছে। তাড়াতাড়ি জ্বীনে ধরা রোগের কবিরাজ করিম মুন্সীকে নিয়ে আসা দরকার। নইলে সমস্যা আরও ভয়াবহ হবে।
যেই কথা, সেই কাজ। আলীর বড়ভাই আব্দুল কাদের দৌড়ে গিয়ে করিম মুন্সীকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো। এদিকে লোকজনের ভীড় আরও বেড়ে গেছে। পাড়ার ছেলে–বুড়ো সব বয়সের লোকজনই চারপাশ ঘিরে জড়ো হয়ে আছে।
করিম মুন্সী বললেন, আপনারা সবাই একটু দূরে সরে দাঁড়ান। নইলে রোগীর পাগলামি আমি থামাতে পারব না।
আলীর দিকে তাকিয়ে করিম মুন্সী বলল, আচ্ছা কী হয়েছে তোর?
রোগী (আলী) উত্তর দিলো, আমার কী হয়েছে? তা দিয়ে তোর কী দরকার?
করিম মুন্সী বলল, তুই কিন্তু আমার সঙ্গে বেয়াদবি করছিস! এর পরিণতি খুব খারাপ হবে।
রোগী (আলী) বলল, আমার কী খারাপ করবি তুই? আমি তোকে ভয় পাই না কি?
করিম মুন্সী বলল, আচ্ছা তোর নাম কী?
রোগী (আলী) বলল, আমার নাম সখিনা।
করিম মুন্সী হেসে হেসে বলল, সুন্দর নাম। আচ্ছা, তুই আলীর উপর কেন ভর করেছিস?
রোগী (আলী) উত্তর দিলো, আলীকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি তাকে বিয়ে করব।
করিম মুন্সী বলল, এ কীভাবে সম্ভব! তুই জ্বীন আর আলী মানুষ।
রোগী (আলী) উত্তর দিলো, আমি এতোসব বুঝি না। আমি আলীকে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে চলে যাব।
করিম মুন্সী বলল, তুই তাহলে আলীকে ছাড়বি না। দেখাচ্ছি মজা। ভাতিজা আব্দুল কাদের, তাড়াতাড়ি শুকনা মরিচ আর আগুন নিয়ে আয়।
এদিকে করিম মুন্সী রোগীর (আলীর) বাম হাতের কনুই আঙুলের নখের গোড়ায় ভীষণভাবে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ দিয়ে চেপে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে রোগী (আলী) জোরে চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু করল।
এদিকে আব্দুল কাদের দাউদাউ করা আগুনসহ একটা পাত্র ও কিছু শুকনা মরিচ নিয়ে হাজির। করিম মুন্সী আগুনে কয়েকটি শুকনা মরিচ ফেলে দিয়ে রোগীর (আলীর) নাকের কাছে নিয়ে ধরল। এবার রোগী (আলী) আরও কান্নাকাটি শুরু করল।
করিম মুন্সী বলল, আলীকে ছেড়ে যাবি কি না বল।
রোগী (আলী) বলল, আমি ছেড়ে যেতে পারি যদি আমাকে আগামী এক সপ্তাহের চারআনা স্বর্ণের একটা আংটি বানিয়ে দিস।
করিম মুন্সী আলীর বাবাকে কাছে ডাকলেন আর বললেন, কী বলেন মুরুব্বি? আপনি কি জ্বীনের দেয়া শর্তে রাজি আছেন?
আলীর বাবা বলল, কী আর করা! আমি রাজি।
করিম মুন্সী বলল, এবার তাহলে বিদায় হ।
রোগী (আলী) বলল, ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। শর্ত ভঙ্গ হলে আবার আসব।
মুহূর্তেই আলী শরীর ঝাঁকা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ থেকে মাটিতে শুয়ে পড়ল।
করিম মুন্সী এবার আলীকে ডেকে উঠালেন। আলী চারপাশে এতোসব লোকের ভীড় দেখে বলল, আমার কী হয়েছে? এতো মানুষ কেন আমাদের বাড়িতে?
আলীর বড়ভাই বলল, তোকে জ্বীনে আছর করেছিল। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।
এদিকে আলীর বাবা দু‘দিন বাদেই স্থানীয় বাজারের এক স্বর্ণকারের দোকান থেকে বেশকিছু টাকা খরচ করে একটা স্বর্ণের আংটি বানিয়ে এনে বলল, আলী এদিকে আয়। এই নে তোর জ্বীনের আংটি। কবিরাজের কথামতো জ্বীনের কাছ থেকে তোকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এই আংটি বানিয়ে দিলাম। হাতের আঙুলে পড়ে রাখ।