জ্বালানি নিরাপত্তা আরো সুসংহত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

| বুধবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রেশনিং করার কাজ শুরু করেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে গত রোববার থেকে প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে বন্ধ রাখা হচ্ছে সব সিএনজি ফিলিং স্টেশন। রোববার থেকে শুরু করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে সোমবার ১৩ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অর্থাৎ ছয় ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়ে মঙ্গলবার সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে পেট্রোবাংলা। সভায় স্টেশন মালিকরা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা পাম্প বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়। পরে সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে চার ঘণ্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের জোগান নিশ্চিত রাখতে সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এভাবে কি তীব্র গ্যাস সংকটের সামাল দেওয়া সম্ভব হবে? এ প্রশ্ন আজ অনেকের মুখে মুখে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষে এ সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা বলেন, ‘দেশের মোট গ্যাসের মাত্র ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয় সিএনজিচালিত যানবাহনে। তাই দৈনিক কয়েক ঘণ্টা যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম নয়। এ ছাড়া প্রতিদিনই কমছে দেশীয় গ্যাসের মজুদ এবং দৈনিক গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণও। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে, দেশে গ্যাসের মোট মজুদ, দৈনিক গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা এবং চাহিদা ও যোগানের হিসাব জানা থাকা সত্ত্বেও সরকার কেন দেশের তীব্র গ্যাস সংকট মোকাবিলার বিষয়ে কোনো আগাম প্রস্তুতি নেয়নি। একই সঙ্গে এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানও জরুরি যে, বিগত বছরগুলোতে সরকার যে জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেছে তা এখনকার এই গ্যাস সংকটের জন্য দায়ী কি না।’
পত্রিকান্তরে গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ার কারণ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুন মাস থেকে এলএনজি আমদানি কম হচ্ছে। দেশে গ্যাসের উৎপাদনও কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে গ্যাস সরবরাহে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সরাসরি এলএনজি কেনা বন্ধ রয়েছে তাই সরবরাহ কমেছে। পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৩০ কোটি ঘনফুট। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা সরবরাহ করে ৩০৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস। ঘাটতি ১২৬ কোটি ঘনফুট। প্রথম দিকে সরকারের নানা কার্যক্রমের কারণে দেশের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বেড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছেছিল। তবে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশেষ করে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অচলাবস্থার কারণে বর্তমানে তা কমে ২৪০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২৪৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, ২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। সমুদ্রে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতা থাকলেও কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে তা ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুটে সীমাবদ্ধ থাকে। বর্তমানে তাও কমে গেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায় আমদানি করা এলএনজি থেকে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় এলএনজি আমদানি কমেছে। স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা হচ্ছে না। তাই সরবরাহ কমেছে, সংকট বেড়েছে। এর পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগে যেখানে ১৮ ঘণ্টা চলত, এখন ২২ ঘণ্টা চলছে। কেউ কেউ অনুমোদিত লোডের চেয়ে তিন-চার গুণ গ্যাস ব্যবহার করছে। ফলে সংকট আরো তীব্র হয়েছে মনে হচ্ছে। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা করতে যা যা করা দরকার, সরকার সেটা করছে’।
তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, ‘গ্যাসের সংকট তৈরি করে এলএনজি আমদানিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বিশেষভাবে কাউকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে’। তাই দেশীয় গ্যাসের পর্যাপ্ত অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমদানি করা গ্যাস দিয়ে দেশ চালাতে গেলে যে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ, তার দায় জনগণকে মেটাতে হবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে। আগামীতে জ্বালানি নিরাপত্তা আরো সংহত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে