জ্বালানি নিরাপত্তায় ব্যবহার হবে বে টার্মিনালের ৪র্থ টার্মিনাল

বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে বিনিয়োগ করবে দেশীয়

হাসান আকবর | সোমবার , ৩ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বে টার্মিনাল ব্যবহার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বঙ্গোপসাগরে জাহাজ থেকে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল খালাস, কুতুবদিয়া থেকে পাইপ লাইনে চট্টগ্রামে জ্বালানি তেল সরবরাহ কিংবা মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার পর এবার বে টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনালটিও জ্বালানি তেল, এলপিজি এবং এলএনজি খালাসের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগে এই টার্মিনালটি নির্মিত হবে। আজম জে চৌধুরীর মালিকানাধীন ইস্ট কোস্ট গ্রুপ এই লিকুইড টার্মিনালটি নির্মাণ করবে।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে নির্মাণাধীন বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে গতি ফিরছে। ভূমি সংকটের বড় অংশ ঘুচে যাওয়ার পর বে টার্মিনালের নির্মাণ পথের বড় অন্তরায় দূর হয়েছে। বে টার্মিনাল প্রকল্পে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বড় বে টার্মিনালে ইতোপূর্বে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যার দুইটি বিদেশী বিনিয়োগে এবং একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এরমধ্যে চতুর্থ টার্মিনালটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্যাস ও অয়েল টার্মিনাল হিসেবে নির্মাণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরীর মালিকানাধীন ইস্ট কোস্ট গ্রুপ এই টার্মিনালে বিনিয়োগ করবে। চতুর্থ টার্মিনালটিকে লিকুইড টার্মিনাল হিসেবে নির্মাণ করে এখানে জ্বালানি তেল, এলপিজি এবং এলএনজি খালাস করা হবে। এই টার্মিনালটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার সক্ষমতাকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেও বন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

সূত্র বলেছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল একটি বড় ইস্যু। যে কোনো দেশের ৯০ দিনের জ্বালানি তেল মজুদ করার সক্ষমতাসহ অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাকেই জ্বালানি নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা মোটামুটি ৩০৩৫ দিনের। এই নিরাপত্তা বাড়াতে ইতোমধ্যে সরকার পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কঙবাজারের কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ করা হয়। ওখান থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত অফ শোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এরমধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাইপ লাইন ছাড়াও মহেশখালীতে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং প্রায় ৮০ হাজার টন ডিজেল সংরক্ষণের ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল ওই দুইটি ট্যাংকে সংরক্ষণ করে ওখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দুইটি পাইপ লাইনের একটি দিয়ে ক্রুড অয়েল ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে এবং অপর পাইপ লাইন দিয়ে ডিজেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যুমনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালস্থ প্রধান ডিপোতে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় মাইলফলক বলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানিয়েছে। দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। প্রতিমাসে দেশে গড়ে ছয় লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি তেল প্রয়োজন হয়। এতো তেল মজুদের সক্ষমতা বিপিসির নেই। তাই বন্দরের বে টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনালকে ঘিরে জ্বালানি মজুদসহ নানা ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এতে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানকে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সঙ্গে নেবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

এই টার্মিনালটি নির্মিত হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুদৃঢ় হবে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, বে টার্মিনালের প্রথম দুইটি টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ডলার করে মোট ৩০০ কোটি ডলার। সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর পোর্ট) এবং আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড এই দুইটি টার্মিনাল নির্মাণের সমুদয় অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া আবুধাবি পোর্টস ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে। চতুর্থ টার্মিনালটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ হবে উল্লেখ করে বন্দর সূত্র বলেছে, এটি লিকুইড টার্মিনাল হিসেবে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, বে টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনালটি হবে লিুকইড টার্মিনাল। দেশীয় কোম্পানি ইস্ট কোস্ট গ্রুপ বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই বারই সীমানা দেয়াল ধসে পড়লো রাতে
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়নে যারা পাশে, তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ চলবে : প্রধানমন্ত্রী