জ্বালানি তেলের বকেয়া পরিশোধের চাপ

ডলার সংকট

| মঙ্গলবার , ২৩ মে, ২০২৩ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

ডলার সংকটের কারণে সময়মতো জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এতে আমদানি বাবদ ৩০ কোটি ডলারের বেশি বিল বকেয়া হয়েছে। এদিকে ভারত থেকে জ্বালানি আমদানির বকেয়া পরিশোধে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে ভারতীয় রুপিতে তা নিষ্পত্তি করতে পারে সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।

দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করা না গেলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে বলে বিপিসির শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি আগের পরিকল্পনার চেয়ে সরবরাহ কমিয়েও দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বাংলাদেশে ডলারের রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। গত ১৭ মে তা নেমে হয়েছে ৩০ দশমিক ১৮ ডলার, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দেওয়ায় রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ইতোমধ্যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে গত ৯ মে চিঠি লিখেছে বিপিসি, যেটির কপি দেখেছে রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা/ডলারের ঘাটতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন ডলারের চাহিদা মেটাতে না পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সময়মতো আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না।

এর আগে গত এপ্রিলে দেওয়া আরেক চিঠিতে বিপিসি বলেছিল, মে মাসের সূচি অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করা না গেলে জ্বালানির মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে। তাতে সারা দেশে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি জানতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পায়নি রয়টার্স।

বিপিসি প্রতি মাসে ৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি এবং ১০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে। ২০২১২০২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৭ লাখ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়েছিল। এই চাহিদা প্রতি বছরই ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ডলার সংকটে কৃচ্ছতাসাধন নীতি মেনে চলার মধ্যে ১৯ অক্টোবরের এক বৈঠকে ২০২৩ সালের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহকারীদের মধ্যে আছে চীনের ইউনিপেক, পেট্রোচায়না, সিঙ্গাপুরের ভিটল, দুবাইয়ের ইনওসি, ভারতের ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশন ও ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসি সূত্র বলেছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। আবার কেউ কেউ নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কম জ্বালানি পাঠিয়েছে। বিপিসির মে মাসের চিঠির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভারতের নুমিলগড় রিফাইনারিকে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে, যেখানে ইন্ডিয়ান অয়েলের কাছে ডিজেল ও জেট ফুয়েল বাবদ ১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার বকেয়া পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে ভারতীয় রুপিতে বকেয়া নিষ্পত্তি করতে পারে তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, রিজার্ভ কমতে থাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক মানদণ্ডে দ্রুত গতিতে এগোলেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে, বাড়ছে চলতি হিসাবের ঘাটতি। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশি মুদ্রার চাপ কমাতে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ, যা গত জানুয়ারিতে অনুমোদন করে সংস্থাটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা