জ্বালানি খালাসে ডলফিন জেটি-৩ ব্যবহারে আগ্রহী যমুনা অয়েল

বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় মেরামত জটিলতায় প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ পদ্মা অয়েলের জেটি (ডলফিন-৬)। জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এখনো মেরামত না হওয়ায় প্রায় ৪ মাস ধরে বন্ধ মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জেটিও (ডলফিন-৫)। এতে করে আমদানিকৃত জ্বালানি খালাসে জটিল সময় পার করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি খালাসের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্দরের অনুমতি নিয়ে ডলফিন জেটি-৪ ব্যবহার করছে বিপিসি। এদিকে জ্বালানি তেল খালাস ও সরবরাহে গতি আনতে বন্দরের ডলফিন জেটি-৩ ব্যবহার করতে আগ্রহী যমুনা অয়েল। ইতোমধ্যে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে যমুনা অয়েল কোম্পানি।
এদিকে জ্বালানি তেল খালাসে পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও ইস্টার্ন রিফাইনারির আলাদা ডলফিন জেটি থাকলেও যমুনা অয়েলের কোনো ডলফিন জেটি নেই। তবে অস্থায়ী ভাসমান জেটি ‘এলজে-৩’ দিয়ে জ্বালানি খালাস ও সরবরাহ দিয়ে আসলেও বর্তমানে জেটিটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এটির ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যমুনা অয়েল সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান জেটি ‘এলজে-৩’র মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বন্দরের জলযান, বাংকার ডিলার, মেরিন ডিলার, ফিশিং ট্রলারসহ বিভিন্ন গ্রাহককে জলপথে জ্বালানি সরবরাহ দিয়ে আসছে যমুনা অয়েল কোম্পানি। বর্তমানে জেটিটি জরাজীর্ণ হয়ে প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই জেটি দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ নিতে অনীহা জানিয়ে যমুনা অয়েলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তাছাড়া স্থায়ী জেটি না থাকার কারণে অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে বলেও যমুনা অয়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এজন্য ডলফিন-৩ জেটিটি ব্যবহার করার অনুমতি পেলে সারাদেশে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হবে বলে বন্দরকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো জেটি ভেঙে বিপিসির অর্থায়নে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় দুইটি ডলফিন জেটি। তন্মধ্যে ডলফিন-৫ ব্যবহার করে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং ডলফিন-৬ জেটি ব্যবহার করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। জেটি দুটি দিয়ে আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি খালাস করা হয়। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির মালিকানাধীন ডলফিন-৭ দিয়ে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েলের জাহাজ হ্যান্ডলিং করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তন্মধ্যে পদ্মা অয়েলের প্রধান স্থাপনার ডলফিন-৬ জেটিটি রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতার কারণে গত জুলাই থেকে বিদেশী জাহাজের তেল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনার ডলফিন-৫ জেটিটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমদানিকৃত ডিজেল খালাসের জন্য আসা ‘এমটি গ্রান্ড এইচ-৮’ জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আভ্যন্তরীণ লাইনগুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে জেটিটিতে বিদেশী জাহাজ বার্থিং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আইন মেনে ‘এমটি গ্রান্ড এইচ-৮’ জাহাজটির কর্তৃপক্ষ থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকার মতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় বলে স্বীকার করেছেন বিপিসির এক কর্মকর্তা। নিজেদের ডলফিন জেটি দুটির অপারেশন বন্ধ থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে গত প্রায় তিন মাস ধরে আমদানিকৃত জ্বালানি খালাসের জন্য বন্দরের ডলফিন জেটি-৪ ব্যবহার করে আসছে বিপিসি। রোববার সন্ধ্যায় কথা হলে ইতোমধ্যে ডলফিন-৬ এর মেরামত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. রাশেদ কাউছার। এরপর ডলফিন-৫ এর কাজও শুরু হবে বলে জানান তিনি।
বন্দরের ডলফিন-৩ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনচারী রোববার দৈনিক আজাদীকে বলেন, যমুনা অয়েলের স্থায়ী কোনো ডলফিন জেটি নেই। এতোদিন অস্থায়ী ভাসমান জেটি ‘এলজে-৩’ ব্যবহার করে জ্বালানি সরবরাহ দিয়ে আসছি। বর্তমানে সেটিও জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে জ্বালানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। যে কারণে গুপ্তখালে আমাদের প্রধান ডিপোর সন্নিকটের বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ডলফিন-৩’ জেটিটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে, এখন এটি চুক্তির পর্যায়ে রয়েছে। চুক্তি হয়ে গেলে এটি ব্যবহার করলে মেইন ইনস্টলেশন (প্রধান স্থাপনা) থেকে জ্বালানি সরবরাহে গতি আসবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমাল্টিপারপাসের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেপ্তার ১