জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে বইয়ের ভুবন

শৈলী প্রকাশন আয়োজিত দিনব্যাপি পাঠক উৎসবে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এবং বই পাঠের দীপ্ত অঙ্গীকারে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো শৈলী প্রকাশন আয়োজিত দিনব্যাপি বর্ণাঢ্য পাঠক উৎসব। ‘বই পারে সব বদলাতে মনোভঙ্গিসকলের কাছে বই তাই প্রিয় সঙ্গী’ এই স্লোগানে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে লেখক পাঠকের মিলনমেলা। উৎসবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও কেমন বই চাই শীর্ষক সেমিনার, স্বরচিত লেখপাঠ, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, ‘বইয়ের পাঠক কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়’ এই বিষয়ে মুক্ত আলোচনা, পাঠকের মুখোমুখি লেখক, একক আবৃত্তি, বৃন্দ আবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচিতে পাঠকদের সপ্রাণ উপস্থিতিতে দিনভর মুখরিত থাকে উৎসব প্রাঙ্গণ। সকাল ৯ টা ৫৯ মিনিটে পাঠক উৎসবের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম.এ মালেক। তিনি বলেন, জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হলে আমাদের বইয়ের ভুবনে প্রবেশ করতে হবে। বই না পড়লে জ্ঞান থেমে যাবে। তাই জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে হলে বই পড়তে হবে। জানার জন্য, নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য বই পাঠের কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের ভেতর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করে বই।

এমএ মালেক বলেন, প্রতিটি বই লেখকের কাছে সন্তানতুল্য। এর পেছনে তিনি সময় ব্যয় করেন, নিজের মেধাকে কাজে লাগান। থাকে অপরিসীম ভালবাসা। অপরদিকে পাঠক যখন বইটি নেন তাকে একটা মূল্য দিতে হয়, টাকা খরচ করতে হয়। বিনিময়ে প্রতিটি বই থেকে পাঠক কিছুটা পেতে চান। বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান। বই পাঠ করে ঠকতে চান না বলেই তিনি পাঠক।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভারসিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন শৈলী প্রকাশনের উপদেষ্টা শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ।

শৈলী প্রকাশনের প্রকাশক বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চলনায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম.এ মালেক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র হচ্ছে দৈনিক আজাদী। সেদিন আমরা একটা স্লোগান দিয়েছিলাম ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আজাদী পরিবার কৃতজ্ঞ যে, জয় বাংলা স্লোগানকে তিনি জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। নিজেকে ভাগ্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজাদী একমাত্র সংবাদপত্র যে পত্রিকার দুইজন সম্পাদক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। একজন হলেন আমার ভগ্নিপতি, আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। উনি মরণোত্তর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন আর আমি পেয়েছি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক। এজন্য আজাদী থেকে আমরা গর্বিত।

সভাপতির বক্তৃতায় ড. অনুপম সেন বলেন, বই হলো সভ্যতা। প্রকৃত সভ্যতা শুরু হয়েছে বই দিয়ে। মানুষ সভ্য হয়েছে বই পাঠ দিয়ে। একটা লাইব্রেরি হলো মহামানবের মতো। নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারে বই। যখন একজন পাঠক লাইব্রেরিতে থাকেন তখন তিনি নিজেকে মহামানবের সঙ্গে আছেন ভাবতে পারেন। তিনি আরো বলেন, পাঠক যদি না থাকে তাহলে গ্রন্থাগারের কোনো মানে নেই। পাঠক না হলে লেখকও হওয়া যাবে না। তাই আগে পাঠক হতে হবে। জীবনে মানুষ অনেক হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এই করুণ সময়ে মানুষ বইয়ের মধ্যদিয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পায়।

অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম বলেন, পাঠক উৎসব শৈলী প্রকাশনের নতুন একটি সংযোজন। পাঠক উৎসবের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে বইমুখি করা। একজন লেখক ও পাঠকের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করবে এই পাঠক উৎসব।

প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব বলেন, লেখক পাঠকের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করবে পাঠক উৎসব। প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের দক্ষ মানবশক্তি দরকার। তাই আমাদের প্রজন্মকে মানবসম্পদে গড়ে তুলতে সচেতন পাঠক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

উদ্বোধনী পর্বের পর ‘কেমন বই চাই’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্ত। আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রনজিৎ কুমার দত্ত, বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন খান।

বিকেল সাড়ে ৩টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা’র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম একাডেমির মহাপরিচালক প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যক্ষ ছন্দা চক্রবর্তী, অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, স্লোগান নিউজ ডটকম এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এটিএম শহীদুল্লাহ শহীদ, স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির, এস. লোকজিৎ মহাথেরো। বইয়ের পাঠক কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এ বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরা, আলোচনায় অংশ নেন প্রাবন্ধিক রেজাউল করিম স্বপন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি শুকলাল দাশ, অধ্যাপক কাঞ্চনা চক্রবর্তী। বিকেল সাড়ে ৫টায় পাঠকের মুখোমখি হন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, শব্দঘর সম্পাদক, বাংলা একাডেমির ফেলো ডা. মোহিত কামাল। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিশুদের বইমুখি করতে ছোটকাল থেকেই বই পড়ার অভ্যাসে নিয়োজিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেডি প্রকল্পে ওপেন ডে উদযাপন র‌্যাংকস এফসির
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার টাকা পাচার হবে : কাদের