জ্ঞানকে পরিশীলিত করে বিতর্ক

দৃষ্টির বিতর্ক উৎসবের সমাপনীতে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, বিতর্ক জ্ঞানকে আরো পরিশীলিত করে। মানুষকে যুক্তিবাদী ও চিন্তাবিদ হিসেবে গড়ে তোলে। তবে জানতে হলে ও জ্ঞান আহরণ করতে হলে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। যত বেশি বই পড়বে তত বেশি জানতে পারবে।
দৃষ্টির ৭ম বিতর্ক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৩০ বছর পূর্তিতে নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী এ বিতর্ক উৎসবের আয়োজন করে দৃষ্টি চট্টগ্রাম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিতার্কিক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক আরো বলেন, মা-বাবা ও শিক্ষক, জীবনে এই তিনজন মানুষকে খুব বেশি প্রাধান্য দেবে। কারণ তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। কোনো কিছুর আশা না করেই তারা তোমার জন্য সবকিছু করে। তারা সবসময় তোমার ভালো চায়। সমাজের জন্য কাজ করতে হবে জানিয়ে এম এ মালেক বলেন, তবে কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে। কোনো কিছুর আশা করে নয়। একসময় এই কাজের ফল তুমি অবশ্যই পাবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমরা চরিত্রবান হয়ে নির্লোভভাবে যদি এগিয়ে যেতে পারো, তবে দেখবে এই সমাজ-দেশ একদিন আলোকিত হবে, উন্নত হবে।
এর আগে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে পলিসি ডিবেটে অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুর নূর তুষার, নগর পরিকল্পনাবিদ দেলোয়ার হেেেসন মজুমদার ও কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহির উদ্দিন। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চট্টগ্রামকে আধুনিক বন্দর নগরীতে পরিণত করতে ব্যর্থ।’ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি কর্মী ও ব্যাংকার মোহাম্মদ রোসাঙ্গীর।
বিতর্কে অংশ নিয়ে ডা. আবদুন নূর তুষার বলেন, আধুনিক নগরী বলতে যা বুঝায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত তেমন আধুনিক কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। চট্টগ্রামই একমাত্র শহর যেখানে পাহাড়-নদী ও সমুদ্রের বিরল সমাহার।
এখানে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আধুনিক কোনো ব্যবস্থাই সেভাবে গড়ে উঠেনি। একটি আধুনিক নগরের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জরুরি। এই বন্দর নগরীতে সেটি আরো ভঙ্গুর। আধুনিক নগরী গড়তে হলে এ সব ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। আর সেটি করতে ঐক্যমত ও সদিচ্ছা প্রয়োজন। খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। চট্টগ্রাম বন্দর ভারতীয় মহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন বন্দর। সমন্বিত উন্নয়ন ছাড়া এই শহরের আধুনিকায়ন সম্ভব নয়। আর শহরকে আধুনিকায়ন করতে ডায়নামিক নেতৃত্বের প্রয়োজন।
দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। দেশের মোট রাজস্বের সিংহভাগই যোগান দেয় এ অঞ্চল। চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলা মানে- উপমহাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলা। বে-টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি, আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে বসবাস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্ব দেন তিনি।
জহির উদ্দিন বলেন, আধুনিক নগরী গড়তে নাগরিকদেরও দায় রয়েছে। আমাদের সর্বগ্রাসী মনোভাব চট্টগ্রামকে নষ্ট করে ফেলছে। নগরের নাগরিকদের আরো বেশি সচেতন ও দায়িত্ববান হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বিতর্ক শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুল বলেন, গত ৩০ বছর ধরে আমরা বিতর্ক নিয়ে কাজ করেছি। সামনেও করতে চাই। ১৯৯২ সালে দৈনিক আজাদীর তৎকালীন সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ-এর হাত ধরেই দৃষ্টির যাত্রা শুরু হয়। দৃষ্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন তিনি। দৈনিক আজাদী এবং চট্টগ্রাম একে অপরের পরিপূরক মন্তব্য করে মাসুদ বকুল বলেন, চট্টগ্রামের যদি কোনো সিম্বল (প্রতীক) থাকে, তবে আজাদী এর একটি।
উৎসবের সমাপনী দিনে পলিসি বিতর্ক ছাড়াও বেলুন বিতর্ক, সংসদীয় বিতর্ক, বারোয়ারী বিতর্ক, প্ল্যানচেট বিতর্ক, জুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এ সব বিতর্কে সভাপতিত্ব করেন কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তানভীর শাহরিয়ার রিমন, ব্যাংকার সাইফ চৌধুরী, চবি শিক্ষক ড. আদনান মান্নান, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, লেখক রোকসানা বন্যা। উৎসবে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহণের জন্য ইউএসটিসি ফার্মা ডিবেটিং ক্লাব ও অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাবের শাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দৃষ্টির শহিদুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান মনি, সাইফুদ্দিন মুন্না, কাজী আরফাত, মুন্না মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দৃষ্টি চট্টগ্রামের সদস্য বাংলাদেশের আয়রনম্যান শামসুজ্জামান আরাফাতকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর আগে এক প্রাণবন্ত আড্ডায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শামসুজ্জামান আরাফাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারা আসছেন মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে?
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬