স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার চিন্তা করা এবং তা কার্যকর করতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলে আজকের শিশুরা আগামীতে এ জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। তার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
যে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবে সে ততটাই বিকশিত হবে। আমাদের ভাবতে হবে, ভবিষ্যৎ বলতে কোনো কিছু নেই। গতকাল কী হয়েছে আমরা জানি, আজ কী হচ্ছে তা দেখছি। কিন্তু আগামীকাল কী হবে তা আমরা জানি না। তাই ভবিষ্যতের ভিত রচনা করতে হবে বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে। শিশু কিশোরদের ভবিষ্যতের ভিত রচনার প্রচেষ্টায় এলোহা বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পৃথিবীতে মাত্র তিনজন মানুষ আছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে তোমাদের মঙ্গল চান। তারা হলেন তোমার মা, বাবা এবং শিক্ষক।
গতকাল শুক্রবার চিটাগং সিনিয়রস ক্লাবে আয়োজিত মেধা মনন ও প্রতিভা বিকাশে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত প্রতিষ্ঠান এলোহার অষ্টম আঞ্চলিক গণিত প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এলোহা চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান উজ্জ্বলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সিভিল সার্জন (অব.) ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী এবং প্রকৌশলী ওসমান ফারুক চৌধুরী। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন।
এম এ মালেক বলেন, একুশ আমার অহংকার। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশের সাথে জড়িয়ে আছে আমার পরিবারের ইতিহাস। একুশের প্রথম কবিতা কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরীর কাঁদতে আসি নি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ছাপিয়েছিলেন আমার বাবা। শুধু কি তাই; একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী প্রকাশিত হয়েছিল। সেই দিন আজাদীর প্রথম হেডলাইন ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি লাল সবুজ পতাকা দিয়ে গেছেন। আমার মৃত্যুর পর লাল সবুজের পতাকাটি আমার কফিনের ওপর শোভা পাবে–একজীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন শব্দের অর্থ জানতে চান। শিক্ষার্থীরাও বেশ মজা পেয়ে যায়।
কারণ যে পারছিল তাকেই তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পুরষ্কৃত করছিলেন।
প্রধান বক্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বলেন, একটা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই ব্যাপারে এলোহা যেন দৃষ্টি দেয়। তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক হিসেবেই আমি বলছি, শিক্ষা দিতে গিয়ে যেন শিক্ষার্থীর ব্রেনের ওপর চাপ না পড়ে। তবে এটা ঠিক বর্তমান সময়ে সামাজিক অপরাধ রুখে শিশু কিশোরদের বিকাশে এলোহা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাদের এখন যেভাবে পরিচালিত করা হবে, সেভাবেই তারা আগামীতে পথ চলবে।
রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান বলেন, মানুষের জীবনে শৃক্সখলার প্রয়োজন রয়েছে। এলোহা সুশৃক্সখলভাবে শিশুদের গড়ে তুলছে। শিক্ষার্থীদের বলবো, মা বাবার আদর্শ মেনে তোমাদের বড় হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা কারণে এখনো অনেক বৈষম্য রয়ে গেছে। যা দূর করতে বর্তমান সরকার কাজ করে চলেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা গণমুখী হলে মেধাবীর জন্ম হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি এলোহার শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিটি মানুষের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা উচিত। ধীরে ধীরে তার শারীরিক মানসিক গঠনের পাশাপাশি লক্ষ্যটাও পরিপক্ক হয়ে উঠে। বলা হয় গণিতে যারা পারদর্শী তারা সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী। কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, বর্তমানে যুগের চাহিদানুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সাইবার ক্রাইম। এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে, তার সন্তানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সরফরাজ খান চৌধুরী বলেন, অংকের মাধ্যমে একটা জীবনকে গড়ে তোলা যায়। এলোহা জ্ঞান চর্চা, মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ইঞ্জিনিয়ার ওসমান ফারুক চৌধুরী বলেন, গণিতের ক্ষেত্রে মেধা বিকাশে এলোহা অনন্য। শিশুদের মেধা বিকাশে এলোহা সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, এলোহা, চট্টগ্রাম একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। এলোহার প্রতিনিধিত্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেন্টাল এরিথমেটিক প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রতিযোগীরা বিস্ময়কর ফলাফলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে।
আলোচনা সভা শেষে কৃতী শিক্ষার্থীদের পুরষ্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাদু প্রদর্শন করেন, জাদু শিল্পী রাজিব বসাক, সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের ও শর্মিলা।