মহামারি করোনা ভাইরাসের দৌরাত্ন্য যেন এখনো শেষ হয়নি। প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের মতন মানুষ মারা যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। এ যেনো মৃত্যুকূপের পৃথিবী, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো চলছে সারা বিশ্বময়। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যেন করোনা প্রতিরোধক, এটা আমাদের আচার-আচরণেই বোঝা যায়। করোনার প্রথম ঢেউয়ে যে বিষাদ চিহ্ন দেখা গেছে পৃথিবীর আকাশের উপর-করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই শংকা, হতাশ চিহ্ন যেন উ’বে গেছে। অশ্লীলতায় ভরা প্রতিটি জনপদে মেঠো পথের গোঙগানির শব্দ, শৈল্পিক সমীকরণে নিঃসংগতার আত্মহরণ। কুরে কুরে খাচ্ছে প্রস্থর নির্মিত মানবদেহ। মহাশক্তিধর আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা নিভৃতচারী ভাইরাস উলোট পালট করে দিয়েছে পৃথিবীর মানুষদের অস্তিত্ব। বিলুপ্তপ্রায় সাহসের ঊর্মিমালা। এরপরেও থেমে থাকেনি যৌনাচারের মহড়া, আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একমাত্র সত্য বিধান বিরোধী কথামালা। পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ইবলিসের মহাপ্রাসাদ। সবাইকে যেতে হবে অনেক দূর, মাটির তলদেশে তলিয়ে যাবে মানব শরীরের সারাংশ। রুহ উঠে যাবে আল্লাহর আরশে। হিসাব নিকাশের পালা শুরু হবে কঠিন বিচারের দিন-তখন সবাই থাকবে এক জাতি, এক সমাজ, এক পরিবার, এক রাষ্ট্র, ‘হে মানব সম্প্রদায়, অবশ্যই আমি তোমাদের একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তোমাদের জন্যে জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার, কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমাদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে আল্লাহতায়ালাকে বেশি ভয় করে, অবশ্য আল্লাহতায়ালা সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন’-সূরা আল্-হুজুরাত-১৩। সেই কঠিন হাশরের দিনে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে সাজিয়ে দেবেন ফেরেশ্তারা। তখন থাকবেনা ধর্ম-বর্ণের পৃথকীকরণ। সবার জন্য থাকবে পাঁচটি প্রশ্ন আর এ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে আসমানের নীচে এবং জমিনের উপরে একমাত্র সত্য গ্রন্থ আল্-কোরআনের ভেতর। যারা জিন্দেগীভর কোরআন চর্চা করেছে, গবেষণা করেছে আর এ কোরআনকে একান্ত আপনজন হিসাবে বেছে নিয়েছে-তারাই হবে সফলকাম। ‘নিশ্চয়ই তারা কাফের হয়ে গেছে যারা বলেছে, আল্লাহতায়ালাই হচ্ছেন মরিয়ম পুত্র মাসীহ; অথচ মাসীহ (নিজেই একথা) বলেছে যে, হে বনি ইসরাঈল, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, যিনি আমারও রব, তোমাদেরও রব; অবশ্যই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে, আল্লাহতায়ালা তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন, আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম; এ জালেমদের (সেদিন) কোন সাহায্যকারী থাকবে না’-সূরা আল্-মায়েদা-৭২। অর্ধপৃথিবীর শাসক হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি ছিলেন দু’ বছর। শেষ কর্মদিবসে তিনি আফসোস করে বললেন, ‘এমন এক চাকুরী আমার জীবনে এসেছে-একটি বিচারও করার সুযোগ হয়নি’। কারণ কোন আসামী ছিল না ইসলামী রাষ্ট্রের স্বর্ণযুগে। হাশরের দ্বীনে কোন ধর্মগ্রন্থ, কোন আদর্শ, কোন মতাদর্শ, কোন তন্ত্র-মন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। শেষ জামানার নবী, শেষ রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সা) এর উপর অর্পিত আসমানি কিতাব পবিত্র কোরআনের অস্তিত্ব থাকবে সেদিন, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ছিল ইহুদি, সাবেয়ী, খ্রিষ্টান-(এদের) যে কেউ এক আল্লাহতায়ালা ও শেষ বিচারের দিনের উপর ঈমান আনবে এবং (ঈমানের দাবী অনুযায়ী) নেক কাজ করবে, ( পরকালে ) তাদের কোন ভয় নেই, তারা কোন দুশ্চিন্তা করবে না’- সূরা আল্ মায়েদা- ৬৯। পৃথিবীর শক্তিধর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাইবেলের উপর হাত রেখে শপথ করেছিলেন অশান্ত আমেরিকাকে শান্ত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। বিভক্ত সমাজকে একীভূত করার সংকল্প নিয়ে যে যাত্রা শুরু তার কি আদৌ সুরাহা হবে? পৃথিবীতে শান্তির আলো ছড়াতে পারে একমাত্র আল্-কোরআন, আল্-কোরআন এবং আল্-কোরআন। একমাত্র সত্য বিধান ইসলাম, ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পুরো করে দিলাম, তোমাদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই পছন্দ করলাম’- সূরা মায়েদা-৩। অশান্ত এ দুনিয়ায় শান্তির পায়রা এনে দিতে পারে একমাত্র ইসলাম। ইসলামের সেই সুমহান মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার জন্যে প্রয়োজন ঈমান উদ্দীপ্ত মানুষের মিছিল। শেষ বিচারের মালিক একমাত্র একজনই-যিনি রয়েছেন মহান আরশে সমাসীন, ‘আল্লাহতায়ালা কি সব বিচারকের (তুলনায়) শ্রেষ্ঠ বিচারক নন’ ? করোনা দেখিয়ে দিয়েছে, কে মহাশক্তিধর? পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো বিপর্যস্ত সেই অদৃশ্য করোনার কাছে, ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিশ্ব মানবকূলের-কারো মুখে কোন রা নেই-সবাই নিঃশব্দ, নিস্তব্ধ। করোনা শিখিয়ে গেছে কার কাছে শেষ আশ্রয়স্থল? শেষ ঠিকানা? আর তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহতায়ালা যাঁর হাতে রয়েছে আসমান জমিনের সমূদয় শক্তি আর তিনিই শেষ বিচারের দিনে এক হাতে ভাঁজ করা সাত আসমান আর অন্য হাতে পৃথিবী মুষ্টিবদ্ধ করে গগনবিদারী আওয়াজ তুলে বলবেন, ‘কোথায় সেই মহাশক্তিধর প্রেসিডেন্ট? কোথায় প্রশান্ত মহাসাগর? কোথায় আটলান্টিক? কোথায় আলেঙা পর্বতমালা? কোথায় গগনচুম্বি প্রাসাদ? জবাবে নিস্তব্ধতা বেয়ে আসবে নিঃশব্দতায়। কোন জবাব আসবে না। আমরা কি সেই রবের আনুগত্য করব না? যিনি দিয়েছেন আমাদের রিজিক, যার কাছে ফিরে যেতে হবে একদিন সবাইকে আর সে সত্য বিধানের কাছে ফিরে যেতে হবে বার বার আমাদের সবাইকে। কখন হবে আমাদের শুভবুদ্ধির উদয়? যারা ছুটছি পঙ্গপালের মতন বিভিন্ন ‘বাদ’ এর দিকে। অন্তঃসারশূন্য সেই বাদগুলো বাদই থাকবে সারাবেলা, সারাজীবন। সমুজ্জ্বল ভাস্বর হয়ে বেঁচে থাকবে একটিমাত্র দ্বীন, একটিমাত্র বিধান, একটিমাত্র আদর্শ। ট্রাম্প, জো বাইডেন, ম্যাঁক্রো-কেউ শান্তির বারতা এনে দিতে পারবে না কস্মিনকালেও। মানবতাবিধ্বংসী মারণাস্ত্রগুলো অসহায়ের মতন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে আল্ কোরআনের একটি বর্ণের দিকে, যে বর্ণের ওজন হবে পৃথিবীর সমস্ত দামী গয়না, জহরত, সমূদয় মূল্যবান সম্পদের চেয়েও অধিকতর মূল্যবান আর এ সবকিছুর মূলে রয়েছে মহামূল্যবান সম্পদ ঈমান আর এ ঈমান আনতে হবে সে মহাশক্তিমান আল্লাহতায়ালার উপর, তাঁর ফেরেশ্তাদের উপর, তাঁর রাসূলদের উপর, তাঁর আসমানী কিতাবের উপর। ‘আল্লাহর প্রতি আনুগত্যকে নিরংকুশ করে তাঁর দাসত্ব কর’-সূরা আল্ যুমার-২।
লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল