বাঁশখালীর পৌরসভা ছাড়া ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে খানাখানাবাদ, বাহারছড়া, সরল, গণ্ডামারা, ছনুয়া ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরের সাথে পশ্চিমে সংযুক্ত। এছাড়া পুকুরিয়া, সাধনপুর,কাথরিয়া, শীলকূপ, চাম্বল, শেখেরখীল ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা সাঙ্গু নদী, জলকদর খাল ও অভ্যন্তরীণ খালের সাথে নানাভাবে যুক্ত। তাই প্রতিটি দুর্যোগে ক্ষতির সন্মুখীন হয় এলাকার জনগণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষাবাদসহ ফসলি জমির। এক সময় বাঁশখালীর পশ্চিমাংশের উপকূলীয় এলাকায় ৯১ এর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী অরক্ষতিত থাকলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিগত দিনে প্রায় ৩০০ কোটির বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ হলেও বর্তমানে ব্লকগুলো খসে পড়ে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। অথচ যেসব এলাকায় ম্যানগ্রোভ বাগান এবং ঝাউবাগান রয়েছে সে সব এলাকায় বেড়িবাঁধ অনেকটা মজবুত থাকায় উপকূলীয় জনগণ স্থায়ী বেড়িবাঁধের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বাগান এবং ঝাউবাগান করার দাবি জানাচ্ছে। বিগত দিনে বাঁশখালীর উপকূলীয় খানাখানাবাদ, বাহারছড়া, সরল, গণ্ডাামারা এলাকার বিভিন্ন অংশে প্রায় ২৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে ঝাউবাগান থাকলে ও বর্তমানে বাহারছড়ার কিছু অংশ এবং খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় কিছু অংশ ছাড়া বাকী সব সাগরের জোয়ারে এবং ঝাউবাগান এলাকায় নানাভাবে জনগণ ব্যবহার ও নানা স্থাপনা করার ফলে দিন দিন বিলীন ও উজাড় হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেন, পাউবো বাঁশখালীর উপকূল যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না। তাদের কোনো দুর্যোগ কিংবা বিপদের সময় পাওয়া যায় না। গাড়ি করে এসে গাড়ি করে চলে যায়, ফলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ স্থায়ী হয়না, জনগণের দুঃখের লাঘব হয়না বলে জানান।
এদিকে জোয়ারের স্রোত অপরদিকে জনগণের প্রতিদিন ডাল–পালা লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য নিয়ে যাওয়া এবং জনগণ ব্যবহার করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সরজমিনে খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত ঝাউবাগান এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ঝাউবাগানের নড়েবড়ে অবস্থাও পড়ে রয়েছে। এছাড়া ঝাউবাগানে গরু ছাগল, জেলেদের জালসহ অন্যান্য সামগ্রী রাখায় ঝাউবাগান ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তবে সেখানে দায়িত্বরত উপকূলীয় বনবিভাগের কর্মচারী মো. এরশাদ বলেন, যেসব ঝাউবাগান পড়ে যাচ্ছে , সেসব গাছগুলো সংরক্ষণ করে পরে নিলাম দেওয়া হবে এবং নতুন করে বাহারছড়ায় ৫ কিলোমিটার এবং খানখানাবাদের রায়ছটায় ৫ কিলোমিটার বনায়নের কাজ করা হবে।
বাহারছড়া ও খানখানাবাদ ঝাউবাগান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শোয়াইব বলেন, এ দুই ইউনিয়নে আগে প্রায় ২৮ হেক্টর এলাকাজুড়ে ঝাউবাগান থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১০ হেক্টরের কম এলাকায় ঝাউবাগান রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাগান নানাভাবে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপকূলীয় বনবিভাগের ফরেস্ট রেঞ্জার মাহমুদুল হাসান রাসেল বলেন, উপকূল রক্ষায় বনবিভাগের নানা ধরনের বনায়ন কর্মসূচি রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩–২০২৪ অর্থ বছরের উদ্যোগে ৬০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান এবং রাস্তার পাশে ১০ হাজার চারার স্টিপ বাগান করা হবে। বনবিভাগের জনবল কম থাকার কথা জানিয়ে বলেন, উপকূল রক্ষায় আরো বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাঁশখালীর উপকূলীয় খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, উপকূল রক্ষায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের পাশাপাশি বনায়ন জরুরি। সেখানে ঝাউ ও ম্যানগ্রোভ বাগান আছে, সেসব এলাকায় বেড়িবাঁধের তেমন ক্ষতি হয় না। আর যেখানে বাগান নেই সেখানে নানাভাবে বাঁধের ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী বাঁধের পাশাপাশি ঝাউ ও ম্যানগ্রোভ বাগান করার আহ্বান জানান।