নিজেকে মৌসুমী ব্যবসায়ী দাবি করলেও তিনি তা নন। তিনি পুরোদস্তুর একজন গৃহিনী। মৌসুমী ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো দায়–দেনা–মুনাফা এমনকি প্রাত্যহিক লেনদেনের রেজিস্টার, বিল–ভাউচার সংক্রান্ত দলিল বা তথ্য সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। সিটি কর্পোরেশন এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর কার্যালয়েও তার নামে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। মূলত তিনি স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। তিনি হলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সাবেক সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজনের স্ত্রী স্মৃতি রানী দেব। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গতকাল স্মৃতি রানী ও তার স্বামী সুনীল কান্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক চট্টগ্রাম অফিস। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়–২ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম ভূঁইয়া। সুনীল বাঁশখালীর পূর্ব চাম্বল এলাকার বাসিন্দা হলেও স্ত্রী স্মৃতি রানীকে নিয়ে নগরীর জামাল খানের হেমসেন লেনের আনোয়ার মঞ্জিলে বসবাস করছেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–২ এর উপ পরিচালক মো. আতিকুল আলম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। এখন এটি তদন্ত করা হবে। এরপর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করার সময় তার স্ত্রী স্মৃতি রানী দেবের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উঠে আসে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর স্মৃতি রানীর দেবের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুদক প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্মৃতি নারী দেব সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্মৃতি রানী নিজ নামে ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাই করলে দেখা যায়, তার নামে ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮২১ টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক জামাল খান রোড শাখায় নিজ হিসাবে থাকা পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৮২১ টাকা তিনি সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি। অর্থাৎ তিনি পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৮২১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। তার এই তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারে বলা হয়, স্মৃতি রানীর মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা। এর বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৫২ লাখ ২২ হাজার ৫০ টাকা। বাকী ৬০ লাখ ৯১ হাজার ৭৭১ টাকা তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ। এসব সম্পদ তিনি ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি মহাজন বিষয়ে এজাহারে বলা হয়, চাকরিতে কর্মরত থাকাকালীন তার অসাধু উপায়ে অর্জিত আয় দিয়ে স্ত্রী স্মৃতি রানীর নামে সম্পদ গড়েছেন। যা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক সূত্র জানায়, স্মৃতি রানী নিজেকে একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋতু ভিত্তিক পণ্য সামগ্রী ক্রয়–বিক্রয় করে কিছু টাকা আয় করেছেন দাবি করলেও মূলত তিনি একজন পুরোদস্তুর গৃহিনী। তিনি মৌসুমী ব্যবসা বা কমিশন ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো দায়–দেনা–মুনাফা এমনকি প্রাত্যহিক লেনদেনের রেজিস্ট্রার, বিল–ভাউচার সংক্রান্ত দলিল বা তথ্য সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেননি। সিটি কর্পোরেশন এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর কার্যালয়েও তার নামে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। প্রকৃতপক্ষে স্মৃতি রানী কোনো ব্যবসায়ী নন উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়, তিনি মূলত তার স্বামী সার্ভেয়ারের অসাধু উপায়ে অর্জিত অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।