কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধকর্ম সেরে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে পিকআপচাপায় একসঙ্গে ছয় পুত্র সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল বুধবার তিনদফায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অর্থসহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ জেলা প্রশাসনের এই সহায়তা সরাসরি তুলে দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ সময় ইউএনও জেপি দেওয়ান, এসি ল্যান্ড মো. রাহাত উজ-জামান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসহায়তা তুলে দেওয়ার সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সবার বিবেককে নাড়া দেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারের পাশে সবসময় থাকার অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি আমি। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সবসময় খোঁজ-খবর রাখতে।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘৮ ভাইয়ের এই পরিবারটি ভূমিহীন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের উপহার হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত ৮ পরিবারকে আমরা খাস জায়গায় নতুন করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে পুনর্বাসনের। এজন্য আজ থেকে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডুলাহাজারা নাথপাড়ার পাশে সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সদস্যরা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাই পায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, ‘পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে খাস জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে মাটি ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন পাশে :
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সর্বশেষ রক্তিম শীল মারা যাওয়ার পরদিন গতকাল বুধবার দুপুরে শোকার্ত বাড়িতে যান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় এবং কক্সবাজার জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে রানা দাশগুপ্ত শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এ সময় বর্ণনা শুনেন সেইদিনের ঘটনার আগে এবং পরের দৃশ্যপট।
এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে নগদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। একইসময় ৫০ হাজার নগদ টাকা এবং সাত বস্তা চাল, প্রয়োজনীয় ডাল, তেলও সহায়তা দেওয়া হয় আর্ন্তজাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) পক্ষ থেকে।
এতে উপস্থিত ছিলেন শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রচারীসহ ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগ ও কক্সবাজার জেলার নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন ঐক্যপরিষদের কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, চকরিয়ার সভাপতি রতন বরণ দাশসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সংসঙ্গ কেন্দ্রসহ শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেও নগদ ২ লক্ষ টাকা, কম্বলসহ বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘নির্মম এই ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাই প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা বা কর্মকর্তাদের প্রতি এই বিষয়টি সামনে রেখেই যাতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। যাতে প্রকৃত দোষীরাই শাস্তি পায়।
আমাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আগামীকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস কাবে সবিস্তারে জানানো হবে।’ ঘটনার পর পরই স্থানীয় এবং জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন যেভাবে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।-বলেন তিনি।