জেলা উপজেলায় লকডাউন

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৬ এপ্রিল, ২০২১ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গতকাল সোমবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে সাতদিনের লকডাউন। প্রথমদিন লকডাউন কার্যকরে মাঠে ছিল প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন উপজেলায় দোকান খোলা রাখায় জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়কে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি টেক্সির চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীতাকুণ্ড পৌরসদরসহ বিভিন্নস্থানে এই অভিযান চালানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসময় একটি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া দোকান খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনা এবং মাস্ক ব্যবহার না করে ঘোরাঘুরিকারীদের সতর্ক করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসা মিল্টন রায় বলেন, সরকারি বিধি নিষেধ মানার জন্য লকডাউনের প্রথমদিনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আজ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন- সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড পৌর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন প্রমুখ।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভিন্নস্থানে রিকশাসহ থ্রি-হুইলার যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে স্বাভাবিক দিনের থেকে ভাড়াও দ্বিগুণ রাখা হয়েছে। আর খোলা স্থানে বাজার পরিচালনা করার কথা থাকলেও সেটি মানছে না কেউ।
আমাদের মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাইয়ে গতকাল সকাল থেকেই সর্বত্র মানুষের চলাচল কমে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি দেখা গেলেও গণপরিবহন দেখা যায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান জানান, বারইয়াহাট ও মীরসরাই সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে জনগণ লকডাউন মেনে চলেছে। তিনি বলেন, মহামারি থেকে রক্ষা পেতে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হবে আমাদের। যা বেঁচে থাকার জন্য করণীয়। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মীরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান ও জোরারগঞ্জ থানার ওসি নুর হোসেন মামুন জানান, লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে উপজেলার আবুতোরাব বাজারে। সেখানে স্থানীয় মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের উদ্যোগে পুরো এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়।
আমাদের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় লকডাউনে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। সড়কে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি টেক্সি। মার্কেট, শপিংমল ও প্রধান সড়কের পাশের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ করা হলেও কিছু দোকান কৌশলে খোলা রেখে বেচাকেনা করেছেন অনেকে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলির মধ্যে দোকান যথারীতি খোলা ছিল। সেখানে চায়ের দোকানে বসে মানুষকে গল্প করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কে লকডাউনের প্রথম দিন সকালে যান চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এতে রাস্তাঘাটে জনসমাগম দেখা গেছে। কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হলেও অনেককে দেখা গেছে তা অমান্য করতে। দুপুর ১২টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এদিন সাপ্তাহিক নির্ধারিত বাজারের দিন ছিল। বাজারের ভেতর বরাবরের ন্যায় জটলা করে বিভিন্ন পশরা সাজানো ভ্রাম্যমাণ দোকানে চলছে কেনাবেচা। বাজারে শারীরিক দূরত্ব মানা হয়নি। নিত্য পণ্যের দোকান ছাড়াও অধিকাংশ দোকানই অর্ধেক খোলা ছিল। দোকানের সামনে কর্মচারী রেখে সাঁটার খুলে ক্রেতাকে ভেতরে ঢুকিয়ে চলেছে বেচাকেনা। একই চিত্র ছিল রাঙ্গুনিয়ার অন্যান্য বাজার ও স্টেশনেও।
নুরুল আজিম মনু নামে এক সিএনজি টেঙি চালক বলেন, রাস্তায় না নামলে পেটের ভাত জোগাবে কে? তাই রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় নেই।
আবদুল আজিজ নামে বাজার করতে আসা একজন বলেন, গতকাল ক্রেতাদের ভিড় দেখে বাজার করিনি। তাই আজ করতে এসেছি।
ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, লকডাউন চাই না। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখতে চাই আমরা।
এদিকে, জনসাধারণকে সচেতন করতে লকডাউন মানার জন্য সড়কে দিনভর অভিযান চালিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিব চৌধুরী। এসময় সড়কে মোতায়ন ছিল বিপুল পরিমাণ পুলিশ। সকালের দিকে লকডাউন উপেক্ষা করে গাড়ি চালানোর দায়ে ১০ সিএনজি অটোরিকশাকে ২ হাজার ৪৭৫ টাকা জরিমানা করা হয়। সন্ধ্যার দিকে বিভিন্ন দোকান খোলা রাখায় এসব দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসময় লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করা হয়।
ইউএনও মো. মাসুদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে রাস্তায় বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এবার আইন প্রয়োগ করা হবে।
আমাদের লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লকডাউন ঘোষণার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল ১১টার দিকে উপজেলা সদরের বটতলী মোটর স্টেশনে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে মোস্তফিজুর রহমান মার্কেটের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন লোহাগাড়া বণিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা কামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বক্তারা বলেন, আমরা বাঁচতে চাই। লকডাউন চাই না। এর আগেও লকডাউনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবারও যদি এই সময় মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকে তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। আমাদের এই ব্যবসার উপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল। ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। এ সময় তারা ‘পেটের দায়ে আন্দোলনে নেমেছি, করোনায় মরতে পারি ক্ষুধার জ্বালায় নয়’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানবো, দোকানপাট খুলবো’ শ্লোগান দেন।
এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবিব জিতু, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ ঘটনাস্থলে ছঁটে যান। দুপুরে প্রশাসনের সাথে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়। এসময় ব্যবসায়ীদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান ইউএনও।
আমাদের উখিয়া প্রতিনিধি জানান, উখিয়ায় লকডাউন কার্যকরে সরকারি সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা দেখা গেছে। গতকাল উখিয়া সদর, কোট বাজার স্টেশনসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও সহকারী কশিনার (ভূমি) আমিনুল এহছান খানের নেতৃত্ব পৃথক অভিযান পরিচালিত হয়।
এছাড়া উখিয়া সার্কেল এবং থানা পুলিশ সরকার নির্দেশিত ঘোষণা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। এ সময় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন অমান্য করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪৩ জনকে ২০ মামলায় ৩০ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, লকডাউন কার্যকরে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটিতে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে লকডাউন। অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেখা গেছে লোকজনকে। গতকাল সকালে শহরের বনরূপা চৌমুহনী, রিজার্ভ বাজার, কলেজ গেইট, ভেদভেদি ও তবলছড়িতে ঘুরে দেখা গেছে, জীবন যাত্রা স্বাভাবিক ভাবে অব্যাহত রয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিনে রাঙামাটিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপাশ খীসা জানান, করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা ও স্যানেটাইজেশন করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ জানান, লকডাউন কার্যকরে সহযোগিতা করছে পুলিশ। আইন অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বান্দরবানে চলছে লকডাউন। এই লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সোমবার লকডাউনের প্রথমদিনে বান্দরবানে চলেনি কোনো গণপরিবহন। শহর ছেড়ে যায়নি অভ্যন্তরীণ সড়কসহ দূর পাল্লার কোনো যানবাহন। এছাড়া ওষুধ, মুদি ও সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্যান্য সব দোকান বন্ধ ছিল। মাস্ক ব্যবহার না করা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্যবসা না করায় কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, সারাদেশের মত করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে বান্দরবানেও। সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহর লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছে প্রশাসন। সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা জানান, করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নতুন করে সোমবার (গতকাল) জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন সদরে, ৪ জন নাইক্ষ্যংছড়িতে এবং ২ জন লামায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্দেশনা পালনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধসোনারগাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার