২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুথান ১৩ শহীদ পরিবারের হাতে ঈদ উপহার ও অনুদানের অর্থ তুলে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার চসিক আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা, চট্টগ্রাম–২০২৫ এ ‘রক্তাক্ত জুলাইয়ে শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণার উৎস’ শীর্ষক আলোচনা ও শহীদ পরিবারকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠান এম এ আজিজ স্টেডিয়াম জিমনেশিয়াম চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, আমরা শুধু ২০২৪ সালের শহীদদের নয়, ১৯৫২–এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এবং বীরশ্রেষ্ঠদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। একই সঙ্গে ৯০–এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি শহীদ পরিবারের সদস্যদের জানাতে চাই–আমরা হয়তো আপনাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দিতে পারবো না, তবে তাদের জন্য কিছু করতে পারি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো, যাতে আপনাদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারি।
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রামে সাইনবোর্ডের ভাষা যেন বাংলা হয় এ দাবি জানিয়ে আসছেন ডা. মাহফুজুর রহমানসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা। আমি এটিকে অত্যন্ত যৌক্তিক মনে করি এবং ইতোমধ্যে একটি টিম গঠনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, যারা চট্টগ্রামের ট্রেড লাইসেন্স এবং হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতাভুক্ত সব দোকান ও মার্কেটে বাংলায় সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক করার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করবো। আমি মেয়র হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। আমরা চট্টগ্রামকে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কিছু খাল পরিষ্কার করা হলেও, দুঃখজনকভাবে এক মাসের মধ্যেই আবার সেগুলো গার্বেজ স্টেশনে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি আইন প্রয়োগ না করি এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় না আনি, তাহলে আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগর উন্নয়ন নিয়ে মেয়র জানান, আমরা একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করছি, যেখানে ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সব সেবা সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই শহর আমার একার নয়, আমাদের সবার। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নগর গড়ে তুলতে হলে দেশপ্রেম ও শহরপ্রেমকে কাজে লাগাতে হবে।
মেয়র চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যতে শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, মেয়র মহোদয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে চট্টগ্রামে একটা দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। আমি মনে করি চট্টগ্রামবাসী অত্যন্ত গর্বিত সারা বাংলাদেশে যেখানে মেয়রশূন্যতায় ভুগছে সেখানে আপনারা একজন জনবান্ধব মেয়র পেয়েছেন। তিনি মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন করেছেন এবং মাসব্যাপী কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এই বইমেলায় একুশের যে চেতনা, এর ইতিহাস সম্পর্কে আপনারা জানতে পারেন। এটা একটা চমৎকার উদ্যোগ। মেয়র মহোদয় বলেছেন যে ভাষার মাসে তিনি কোনভাবেই যাতে বাংলা ভাষার অমর্যাদা না হয় সেই ভাষার মাসের মর্যাদা রক্ষার্থে তিনি প্রত্যেকটা সাইনবোর্ড যেগুলি ইংরেজিতে লেখা আছে সেই সাইনবোর্ডগুলি তিনি বাংলায় করে দেয়ার উদ্যোগ নিবেন। এটা একটা মহৎ উদ্যোগ মেয়র মহোদয়ের। এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আর যেহেতু মেয়র মহোদয় জনবান্ধব কাজ করছেন, ছুটে চলছেন মানুষের কল্যাণে সেই সূত্র ধরে জেলা প্রশাসন সবসময় মেয়র মহোদয়ের যেকোনো ইতিবাচক কাজে পাশে থাকবে। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে মেয়র মহোদয়কে এই কমিটমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামী আমির শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা পেল তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। জুলাই আন্দোলনে জনতার পক্ষে অংশ নেয়া সবাইকে নিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তির সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজা। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।