চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন গত জুন এবং চলতি জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল। অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন সম্পন্ন করে অক্টোবরে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মহানগরের সম্মেলনের ব্যাপারে টাইমফ্রেম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত মে মাসে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া এসব নির্দেশনার পর প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গেলেও সমন্বয়ের অভাবে নগরীর অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শুরু করতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ।
মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা আজাদীকে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন নগরীতে ১৫টি সাংগঠনিক থানা, ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৩২টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ইপিজেড থানায় সম্মেলন হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪ থানায় এখনো সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট থানার সব ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন না হওয়ায় থানা সম্মেলন করা এতদিন সম্ভব হয়নি। এছাড়া ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৫টি ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এখনো ২৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়নি। ইউনিট সম্মেলন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের আওতাধীন ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০টি ইউনিট ছাড়া অবশিষ্ট সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে।
ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে নানা বির্তকের কারণে নগর আওয়ামী লীগের এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দাখিল করলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন গত বছর স্থগিত করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী দুই পক্ষকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে বেশ কিছু ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে সব ধরনের সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সংসদ নির্বাচনের আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন আর শুরু করা যায়নি।
সংসদ নির্বাচনের পর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতারা টাইমফ্রেম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ১৯ মে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ব্যাপারে একটা টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে। জুন–জুলাই মাসের মধ্যে নগরীর সকল থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে হবে। এরপর আগামী অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। যেখানে সমস্যা আছে (ওয়ার্ড, ইউনিট) সেগুলো মহানগর আওয়ামী লীগ বসে ঠিক করবে।
ওইদিনের সভায় তিনি ২২ মে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বসে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জুন–জুলাইয়ের মধ্যে নগরীর সকল থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সম্মেলন শেষ করার কথা ছিল। জুন শেষে এখন জুলাই মাস চলছে। জুলাইয়ের ২৭ দিনের মধ্যে নগরীর ৮৩টি ইউনিটের (১৪ থানা, ২৯ ওয়ার্ড ও ৪০টি ইউনিট কমিটি) সম্মেলন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা। অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকটি সভা হলেও সমন্বয়ের অভাবে টাইমফ্রেম অনুযায়ী এগোতে পারেনি।
নগর আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদীকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন হলে কারো আপত্তি নেই। গঠনতন্ত্র না মেনে থানার সমন্বয় কমিটির আহ্বায়কদের পাশ কাটিয়ে কেউ একক সিদ্ধান্তে সম্মেলন করতে চাইলে সেটা নেতাকর্মীরা মানবে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে বেশ কিছু ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপি–জামায়াতের লোকজনকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
২১ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতাদের যোগাযোগের আহ্বান : ২৯ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন যেসব ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি সেগুলোর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে ইউনিটগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসে যোগাযোগ করার জন্য নগরের সাধারণ সম্পাদক অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন যে সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি, নির্ধারিত তারিখে সেগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ ও সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলমান রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংগঠনের দারুল ফজল মার্কেট দপ্তর খোলা থাকবে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এ সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও অবগতির জন্য থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।
কার্যনির্বাহী কমিটির সভা কাল : নগরীর অসমাপ্ত থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগ। নগরীর যেসব ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি সেগুলোর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে আগামীকালের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আহ্বান জানিয়েছেন।