জুলাই থেকে ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব

| সোমবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী জুলাই থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের হেয়ার রোডের বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে থাকা একজন চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকদের জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই মাস থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা এখান থেকে সেটা মেনে নিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. জহিরুল হক শাকিল, এনডিএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ডা. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু বৈঠকে ছিলেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিলেন ডা. জাবির হোসেন, ডা. নুরন্নবী, ডা. ইমরান শিকদার।

এনডিএফ নেতা আতিয়ার রহমান বলেন, তাদের ভাতা বাড়ানোর একটা দাবি ছিল। বৈঠকে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু স্যার সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তবে সেটা এখন থেকেই দেওয়া যাবে না, সামনের বাজেটে এটা দেওয়া হবে। আমি যতদূর বুঝেছি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা সেটা মেনেই এখান থেকে গিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা একটা দাবি করেছেন, সরকারের অবস্থাও বিবেচনা করতে আমরা তাদের অনুরোধ করছি। তারা রাস্তায় থাকলে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়; তারা যেন কাজে ফিরে যান।

সরকারের প্রস্তাবের বিষয়ে আন্দোলনকারীরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক বলেছেন, আমরা ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সম্ভবত মেনে নিচ্ছি না।

সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জুলাই মাসে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। ২২ ডিসেম্বর তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা রাস্তা ছাড়েন। এ অবস্থায় অর্থবিভাগ গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীদের পারিতোষিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে সময় ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের সঙ্গে ওয়াদা বরখেলাপ করা নতুন কিছু না। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে আর কোনো বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।

মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়ানোর সরকারি ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা বা নবম গ্রেডের গ্রেড দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবিতে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের (ডিএমজে) ব্যানারে বিভিন্ন মেডিকেলের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের একজন মোহাম্মদ তানভীর রহমান দীপ বলেন, ৯টা থেকে তারা অপেক্ষা করছিলেন দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস আসে কিনা। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর তারা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করেন। আমাদের দাবি ছিল, ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সুযোগসুবিধাসহ নবম গ্রেড দেবে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। ভাতা মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কিন্তু আমরা সেই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছি। ৫০ হাজার অথবা নবম গ্রেডের সুযোগ সুবিধা দিয়ে নতুন করে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। নইলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না, আমাদের কর্মসূচি চলবে। পুলিশ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

চিকিৎসকরা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ায় সেখানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। তিনি পৌনে দুইটার দিকে বলেন, চিকিৎসকদের অবস্থানের ফলে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কথা বলে তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছি।

গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চিকিৎসকদের কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামানের গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলাই ঘোষণাপত্র দিয়ে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচনা করা হবে
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড় কাটার কৌশল এবার অন্যরকম