আসছে জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের আয়ের ওপরই নতুন হারের আয়কর প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। অর্থাৎ, ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে একজন ব্যক্তি যে আয় করবেন, তার ওপর তাকে নতুন হারে কর দিতে হবে। এই সময়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয়ের জন্য তাকে কোনো কর দিতে হবে না। এর বেশি আয়ের জন্য তাকে কর দিতে হবে বাজেটে ঘোষিত নতুন করধাপ অনুযায়ী। খবর বিডিনিউজের।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত সোমবার তার বাজেট বক্তৃতায় আয়করের নতুন এই কাঠামো প্রস্তাব করেন। সেখানে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলেও কর বাবদে আয় বাড়াতে কর ধাপ সাতটি থেকে কমিয়ে ছয়টি করার প্রস্তাব করা হয়। তাতে করযোগ্য হলেই আগের চেয়ে বেশি হারে কর দিতে হবে। সার্বিকভাবে অধিকাংশ করদাতার ওপর করের চাপ বাড়বে। কিন্তু বাজেট বক্তৃতার ছকে অর্থবছর না লিখে করবর্ষ লেখায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বাজেটের আয়কর প্রস্তাব নিয়ে একেক সংবাদমাধ্যমে একেক ধরনের প্রতিবেদন ছাপা হয়।
মঙ্গলবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন শেষে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আব্দুর রহমান খান বলেন, জুলাই থেকে যে আয়টা করবেন তার ওপর এটা হবে। জুলাই থেকে জুন (২০২৫–২৬ অর্থবছর জুড়ে) পর্যন্ত যে আয়টা করব তার ওপর হবে। পরে রিটার্নে সেটা দেবেন।
বিষয়টি আরো স্পষ্ট করতে জুলাই থেকেই করের হার পাল্টাচ্ছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ বলতে পারেন। ইনকাম ইয়ার তো জুলাই থেকেই। আর এমনিতে যেটা এখন গেল (অর্থবছর ২০২৪–২৫), জুনে শেষ, এটা আগের রেটেই। অলরেডি গতবার বলে দেওয়া হয়েছে।
আয়করের বিধানের অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে মূলত অর্থবছর ও করবর্ষের ভিন্নতা থেকে। এ দুটি একই সংখ্যায় থাকলেও অর্থ ভিন্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী, করবর্ষ বোঝায় আগের অর্থবছরের আয়ের ওপর পরের অর্থবছরে যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়, সে সময়টাকে। অর্থাৎ, এখন যে অর্থবছর চলছে, তার আয়ের ওপর করতে দিতে হবে জুলাই থেকে পরবর্তী সময়ে। সাধারণত এটি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দিতে হয়। অর্থাৎ, ২০২৫–২৬ করবর্ষে দিতে হবে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আয়ের ওপর কর। ফলে আগামী নভেম্বরের মধ্যে যে আয়কর দিতে হবে, সেটা নির্ধারিত হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা করমুক্ত আয়সীমা ধরে আগের করধাপ অনুযায়ী। আর ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আয়ের জন্য কর দিতে হবে ২০২৬–২৭ করবর্ষে। আগামী বছরের জুলাইয়ের পরে যে রিটার্ন দিতে হবে, সেখানে কর নির্ধারিত হবে পৌনে ৪ লাখ টাকা করমুক্ত আয়সীমা ধরে নতুন করধাপ অনুযায়ী।
আয়করের বিধান এভাবে করার কারণ হল, একজন করদাতা সারা অর্থবছর যে আয় করেন, তার ওপরে কর কমাতে কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত বা ছাড় পাওয়ার চেষ্টা তিনি করতে পারেন। ফলে ২০২৬–২৭ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে যখন তিনি আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, তখন তাকে কর ছাড় পেতে হলে তার বিনিয়োগ ও আয়ের পরিকল্পনা ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকেই শুরু করতে হবে।