জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রকৃতপক্ষে জনগণের সম্মিলিত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন চিন্তক ও লেখক প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, অনেকেই জুলাই অভ্যুত্থানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই গণঅভ্যুত্থান প্রকৃতপক্ষে জনগণের সম্মিলিত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। সরাসরি বহিঃপ্রকাশ। তবে অভ্যুত্থানের বড় সমস্যা হচ্ছে জনগণকে একত্রিত হতে হবে।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘আবুল মনসুর আহমেদের রাষ্ট্রচিন্তা : প্রেক্ষাপট গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রচিন্তা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এসময় তিনি আরও বলেন, সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এ কথা ঠিক নয়। বইয়ে যেমন লেখা থাকে এই গ্রন্থের লেখক কর্তৃক সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। ঠিক একইভাবে জনগণ কর্তৃক দেশের সকল ক্ষমতা সংরক্ষিত। তবে জনগণ সাময়িকভাবে সরকারকে তা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। যখন সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করে, জনগণ তাকে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার যেকোনো সময় রাখে। যখন নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা প্রয়োজন হয় তখন অপেক্ষা করে। যখন নির্বাচনই আর না থাকে, তখন যে কোনো মুহূর্তে তাকে সরিয়ে দেয়া যায়।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, শেখ হাসিনার আমলে সংবিধানে একটি সংশোধন করা হয়েছে। যে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চাইবে তার শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড। সেটা অবশ্যই শেখ হাসিনার প্রাপ্য। তিনি ভারতে থাকুক, তিনি আমেরিকায় থাকুক, তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসুক। নৈতিকভাবে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তবে এটা কার্যকর করতে পারবে কিনা সেটা অন্য ব্যাপার। কারণ তিনি বলেছেন, যে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাহলে তিনি কি বৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন?
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রচিন্তা, চবির উপদেষ্টা চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ. আর রাজির সভাপতিত্বে ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য তানভীন কায়েসের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, চবি উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফ খান ও আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ইমরান মাহফুজ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্রচিন্তাকে ধন্যবাদ খুবই সুন্দর বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। আলোচনায় উঠে এসেছে এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হল বন্ধ আছে। তবে আমাদের গত প্রশাসনের দুর্নীতির ফলে আমরা এখনও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে পারিনি। তবে আমরা স্থির থাকিনি। এই প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ আমাদের ইতিহাসে যে বড় বড় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছে সেসব আন্দোলনে এলিট শ্রেণীরা অংশ নেয়নি, অংশ নিয়েছে গণমানুষ। আবুল মনসুর এলিট শ্রেণী হলেও তিনি এসব আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন।
অ্যাডভোকেট আরিফ খান বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় সকলের ধর্মের স্বাধীনতা থাকতে হবে বলেছেন। ৭১ ও ২৪ এ আমাদের সংগ্রাম ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আবুল মনসুর আহমেদও সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন আইকনিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাঙালি মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় কাজ করে গেছেন এই রাজনৈতিক বিজ্ঞানী।
কবি ইমরান মাহফুজ বলেন, আবুল মনসুরের লেখায় উঠে এসেছে গণতন্ত্রে আমাদের শিক্ষকরা ফেল করেছে বলেই আমাদের গণতন্ত্র ফেল করছে। আবুল মনসুর বলেছেন গণতান্ত্রিক সরকার সঠিক পথে চলতে পারে যদি তার নাগরিক সোচ্চার হয়। আমরা যদি সোচ্চার না হই তাহলে শুধুমাত্র গণজাগরণ বা ২৪ আবু সাঈদের জীবন দেয়া পরিবর্তন এনে দিতে পারবে না।