বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের ক্যাটাগরি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেছেন চট্টগ্রামে আহতদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, আহতদের যে ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে এতে বৈষম্য করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল চারটার দিকে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে বিকেল চারটার দিকে নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আহতরা। মিছিলটি আসকার দীঘির পাড় হয়ে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আন্দোলনে আহত সুলতানা নূরী বলেন, পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে আমার কষ্ট হয়। কারো কথায় আন্দোলনে নামিনি। বুকে সাহস নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছি ও করেছি। তাহলে এখন কেন আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে? যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আমাদের নিয়ে চিন্তা করছে না। তারা আছে কমিটি নিয়ে। তিনি বলেন, এখনো অনেকে হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করছে। আমরা সাহায্য নিতে গেলে আগে সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে যেতে হয়। আমরা কি আন্দোলন তাদের জন্য করেছিলাম? আমাদের কাছে তারা আসার কথা ছিল। আহতদের ক্যাটাগরিতে অসমতার অভিযোগ তুলে নূরী বলেন, একজন ভাইয়ের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে দেওয়া হয়েছে ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে। আমরা তো এসবের জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা চাই, যারা গুরুতর আহত তাদের ‘এ’ ক্যাটাগরি ও একটু কম আহতদের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসা হোক। আর সবাই যেন সরকারি স্বীকৃতিটা পায়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাকের উল্লাহ বলেন, আমি বাঁশখালীতে প্রথম গুলিবিদ্ধ। চারটি গুলি করা হয়েছে আমাকে। আমাকে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। আমার পুরো শরীরে গুলি ও ধারালো কিরিচের কোপের আঘাত। আমাদের ‘এ’ ক্যাটাগরি না দিলেও ‘বি’ ক্যাটাগরি দেওয়া দরকার। এখানে বৈষম্য হচ্ছে। সেজন্য আমরা এখানে সমাবেশ করছি। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হোক। আমাদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা হোক। সোলেমান স্বপন নামে আরেকজন বলেন, যেসব কমিটি দেওয়া হচ্ছে সেখানে আহতদের নাম নেই। আমরা সে কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। আহত ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী কলি আক্তার জানান, তার স্বামীর ডান হাতে গুলি লেগেছে। আট মাস ধরে তিনি শয্যাশয়ী। ওই জায়গায় তার স্বামীকে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরি। স্বামীর এমন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তিনি। কলি আক্তার বলেন, যারা আন্দোলনে গিয়ে একটি লাঠির আঘাত পেয়েছে তাদেরকেও সরকার থেকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আজ আমার স্বামী আহত হিসেবে শনাক্ত হয়েও অবহেলার শিকার। মেডিকেলে গেলেও আমাদের অবহেলিত হতে হয়। তিনি বলেন, আট মাস ধরে আমার পরিবার নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। সামনে রমজান ও ঈদ আসছে। পরিবারে আয়ের উৎস শুধু আমার স্বামী। এখন নিরুপায় হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।
উল্লেখ্য, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের ক্যাটাগরি ‘এ’ অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি–বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি বা আধা সরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া ক্যাটাগরি ‘সি’ তে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন আহতরা ও ক্যাটাগরি ‘ডি’ তে প্রত্যেকে পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা।