জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন চাইল বিএনপি

সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয় সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জুলাই ঘোষণাপত্র : মতামত দিতে সময় নিতে চায়

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বারবার করে বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নাই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট বিষয়। আমরা মনে করি যে, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাইআগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এই কারণে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আগের রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল। বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। খবর বিডিনিউজের।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়েএ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি যে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে গভর্নেন্সের মধ্যেসেই ক্ষেত্রে এই নির্বাচন (জাতীয় নির্বাচন) অনুষ্ঠানের জন্য মনে হয় যে, এই মাসে আগামীকাল সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্ট এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরও বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয় : জাতীয় নির্বাচনের পরে স্থানীয় সরকার করার পক্ষে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান তুলে ধরার একদিন বাদে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ফখরুল। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই উঠে না। আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই।

গত রোববার ইসির বৈঠক শেষে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, কমিশনের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। সেদিকে এগোচ্ছেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন তো ফোকাসটা পুরো দেশের, পুরো জাতির হচ্ছে, এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপরে। ক্রাইসিসটা ওই জায়গাতে। গত তিনটা জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি, মানুষ সেজন্য তারা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ, সেটাকে তারা পূরণ করতে চায়। আপনাদের বুঝতে হবে, লোকাল গভর্মেন্ট দেশ চালায় না, দেশ চালায় কিন্তু জাতীয় সংসদ। আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ। এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র ফাংশনাল হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ রকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই বা আসে কোত্থেকে? কারণ এটা তো আপনার প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা লাইনে, রেললাইনের উপরে তুলতে চান তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। সংস্কার তো আছেই, চলমান প্রক্রিয়া; আমরাই তো সংস্কার আগে তৈরি করেছি, আগে জাতির কাছে উপস্থাপন করেছি। সেই ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন২০৩০’ দিয়েছি, ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, লোকাল গভর্মেন্টের তৃণমূল স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সেই ইউনিয়ন পরিষদই তো সরকার বাতিলই করে নাই। সেটা যদি বাতিল না করে, সেখানে কীভাবে লোকাল গভর্মেন্ট নির্বাচন হবে?

নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত : মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের জন্য কতগুলো ফরমালিটিজ আছে, যেমন ভোটার লিস্ট, এই ভোটার লিস্ট রেডি। ভোটার লিস্ট হালনাগাদে বেশিদিন লাগার কথা নয়। এক মাসের মধ্যেই আপনার যদি কেউ হালনাগাদ করতে চায় সেটা করতে পারবে। এরপরে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ একদুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সবই তো তৈরি। নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, নির্বাচন করার জন্য আমরা রেডি এবং তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য তৈরি আছে। তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যে, দুইটা নির্বাচন এক সাথে সম্ভব না। সুতরাং এটা জাতির স্বার্থে প্রয়োজন এই নির্বাচনটা (সংসদ নির্বাচন)

জুলাই ঘোষণাপত্রে মতামত দিতে সময় নিতে চায় : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিতে চায় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এটা একদিনের নোটিসে করা সম্ভব না।

গতকাল বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সাহেবের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়া পেয়েছি এবং উনি অনুরোধ করেছেন যে, এই বিষয়ে আমাদের মতামত জানানোর জন্য। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি, আমরা আরও আলোচনা করছি। আমাদের অন্যান্য দলগুলো আছে, তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কারণ এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেটি আমাদের দেখতে হয়।

ফখরুল বলেন, সুতরাং আমাদের ওই সময়টুকু লাগবে আর কি, আমরা চেষ্টা করছি, আলোচনা করছি এটার ওপরে। তিনি বলেন, বিএনপি একটা দায়িত্বশীল দল। এর জন্মই কিন্তু সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সাহেব তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন, যা সবচেয়ে বড় সংস্কার। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বদলাতে পারে, চেঞ্জ হতে পারে। চেঞ্জ ছাড়া তো এগোবে না। সভ্যতা এগোবে না, রাজনীতি এগোবে না, কোনো কিছুই এগোবে না।

পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচার : সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচার করবে। যে ফ্যাসিজম বলছেন, এটার বড় শিকার বিএনপি। আমাদের ওপরে যে নিপীড়ননির্যাতনগুম হয়েছে এটা আর কার ওপরে হয়েছে? এমকি অন্য দলগুলোর মধ্যে, আমরা এবং জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি অ্যাফেক্টেড হয়েছি। আমাদের ওপরে অত্যাচারটা তো সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

ফখরুল বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টদের বিচার করব না তো কে বিচার করবে? আমরা যদি ক্ষমতায় আসি আর যেটা (বিচার) শুরু হয়েছে, এখান থেকে সরে যাওয়ার কারো কোনো উপায় নেই। অবশ্যই বিচার হবে। আবার বিচারে তড়িঘড়িও করা যাবে না। তড়িঘড়ি করলে কিন্তু এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। বিচার একটা প্রক্রিয়া, এটা চলবে। অবশ্যই আমরা সেই বিচার শেষ করব, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।

নির্বাচন প্রশ্নে দ্বিমত নেই : আরেক প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো দ্বিমত তিনি দেখছেন না। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের একটা স্বকীয়তা আছে, তাদের চিন্তাভাবনা আছে। আমরা মনে করি, এই কারণে নির্বাচন দ্রুত করা সম্ভব, অসম্ভব কিছু না। জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন, আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছি।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা প্রত্যেকে বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারো দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডান দল, যতগুলো আছে, সবাই ইতোমধ্যে। আপনারা দেখেছেন যে, সিপিবি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীর যে নির্বাচনের ব্যাপারে খুব বেশি পার্থক্য আছে, তেমন দেখি না। কয়েকদিন আগেও উনি (জামায়াত আমির শফিকুর রহমান) বললেন, নির্বাচন করা দরকার, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা দরকার। তাই পার্থক্য দেখছি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধ্বংস করা হলো নিলাম অযোগ্য ২৩৫ টন পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধখালাস পেলেন বাবর