তাক্দীরের প্রতি ঈমান
তাকদীর অর্থ: তাকদীর আরবি শব্দ, ক্রিয়ামূল, এর অর্থ ভাগ্য নির্ধারণ। শরয়ী পরিভাষায়: আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক মানবজাতির জীবনের ভাল-মন্দ, জীবন-মরণ, কল্যাণ-অকল্যাণ সবই নির্ধারিত। এ নির্ধারণকেই কুরআন সুন্নাহর আলোকে তাকদীর বলা হয়। (আল আক্বিদাতুত তাহাবীয়া, পৃ: ৭৬)
পবিত্র কুরআনের আলোকে তাকদীর:
কখন কোথায় কার জন্ম হবে, কার মৃত্যু কখন কোথায় কিভাবে হবে, কে কী পরিমাণ কীভাবে রিযক ভোগ করবে, সুখ-শান্তি, বিপদ-আপদ, রহমত-বরকত, নিয়ামত, গযব, শাস্তি সব বস্তুর তিনিই স্রষ্টা। যার জন্য যতটুকু সব তারই ইচ্ছায় নির্ধারিত। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আর আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত।” (সূরা: আহযাব, আয়াত: ৩৮)
মহান আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। এরশাদ করেছেন, “তিনি আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথার্থ অনুপাতে। (সূরা: ফোরকান, আয়াত: ২)
জীবন মৃত্যু ও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত:
জীবনের জন্য মরণ অনিবার্য বাস্তবতা। ধরাধামে যাদের আগমন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে তাদের প্রস্থান ও বিদায় অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মূহুর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবেনা। (সূরা: আ’রাফ, আয়াত: ৩৪)
হাদীস শরীফে তাকদীর প্রসঙ্গ:
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মীন হবেনা যতক্ষণ না সে চারটি বিষয়ের উপর ঈমান আনবে।
১. একমাত্র আল্লাহর উপর যার কোন শরীক নেই। ২. নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল। ৩. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি। ৪. তাকদীরের ভালমন্দের উপর ঈমান আনা। (ইবনে মাযাহ, হাদীস নং: ৮১)
আসমান যমীন সৃষ্টির পূর্বে তাকদীর লিপিবদ্ধ করেন: তাকদীর লিপিবদ্ধ করণ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি কুলের তাকদীর সমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
তাকদীর’র প্রকারভেদ: তাকদীর দু’প্রকার, ১. তাকদীরে মুবাররম। ২. তাকদীরে মুআল্লাক। প্রথম প্রকার তাকদীর পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব। যা নির্ধারিত তা অনিবার্য বা অবশ্যম্ভাবী। খোদায়ী নির্দেশ মোতাবেক এটা ঘটবেই, যেমন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে লূত সম্প্রদায়ের জন্য দুআ করতে বারণ করা হয়েছিলো কেননা তাদের উপর দুনিয়াবী আযাবের ফায়সালা মুবাররম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো। দ্বিতীয় প্রকার তাকদীর মুআল্লাক, যা দান সাদকা নেক আমল ও দুআর ফলে পরিবর্তন হয়। কুরআন হাদীসের আলোকে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম’র বয়স ৬০ বৎসর নির্ধারিত ছিল। হযরত আদম আলাইহিস সালাম’র দুআর বদৌলতে ১০০ বৎসরে উন্নীত হয়েছিল। [মিরআত শরহে মিশকাত, ১ম খন্ড, বাবুল কদর কৃত: হাকীমূল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র.)]
হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে, হযরত সওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নেক কাজ ব্যতীত অন্য কিছুতেই আয়ুবৃদ্ধি পায়না, দুআ ব্যতীত তাকদীর পরিবর্তন হয় না, আর পাপাচারের কারণেই মানুষকে তার জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ৯০)
অবশ্যই দুআর ফলে তাকদীরের পরিবর্তন, তাকদীরের লিখন মুতাবিকই হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেক জিনিষের অস্তিত্ব কার্যকারণের উপর নির্ভরশীল, লৌহবর্ম আঘাতকে প্রতিহত করে, দুআ বালা মুসিবত বিপাদাপদ দুরিভূতকারী। প্রতিরক্ষার জন্য লৌহবর্ম ব্যবহার যদি তাকদীরের পরিপন্থি না হয়ে থাকে, তাহলে দুআ কিভাবে তাকদীরের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে? [ফাযায়েলে দুআ, পৃ: ১৪৩ কৃত: আল্লামা নকী আলী খাঁন বেরলভী (র.)]
তাকদীরকে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট: হযরত ওমর রাদ্বিয়াআল্লাহু তা’আলা আনা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাকদীরের ভালমন্দ সকল কিছুর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। (সহীহ মুসলিম)
তাকদীর অস্বীকারকারী সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তাকদীর অস্বীকারকারী ফিরকা এ উম্মতের অগ্নিপুজক ফেরকা। (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
অর্থাৎ অগ্নিপুজক ফের্কা যেমন ইয়াজদান ও আহরামান নামে দুই স্রষ্টা বিশ্বাস করে তাকদীর অবিশ্বাসীরাও তদ্রুপ। তাকদীরে অবিশ্বাসীরা আল্লাহর একত্ববাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল। সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, তাকদীরের উপর ঈমান স্থাপন করা একত্ববাদের উপর ঈমানের নামান্তর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল তাকদীরে বিশ্বাস করল না সে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের সম্পর্ক ছিন্ন করল। (কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ: ১২৩)
সব কিছু যখন তাকদীরে লিপিবদ্ধ বান্দা কেন কর্মের জন্য দায়ী হবে?
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আপনি বলুন! আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা, তিনি একক মহা পরাক্রমশালী। (সূরা: রাদ, আয়াত: ১৬)
বর্ণিত আয়াতের আলোকে ভাল ও মন্দ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। কাদরীয়াদের মতে মানুষ নিজেই নিজের কর্মের স্রষ্টা। তাদের মতে এ শক্তি স্বীকৃত না হলে তাকে ভাল বা মন্দ কাজের জন্য দায়ী করা যুক্তিযুক্ত নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা মতে কাদরীয়াদের এ ভ্রান্ত মতবাদ পরিত্যাজ্য। প্রথমত: এটা কুরআনের বর্ণিত আয়াতের বিরোধী। দ্বিতীয়ত: মানুষকে যদি নিজ কর্মের স্রষ্টা বলা হয় তাহলে পৃথিবীতে অসংখ্য স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হয়। যা সুস্পষ্ট গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার নামান্তর।
আল্লাহ সকল কাজের স্রষ্টা বান্দা অর্জনকারী: ইসলামী আক্বিদা হলো আল্লাহ সকল প্রকার ভাল ও মন্দ কর্মের স্রষ্টা, বান্দা কর্মের অর্জনকারী, বান্দার জন্য কর্ম অর্জনের ইচ্ছা ও স্বাধীনতা রয়েছে। ভালকর্ম অর্জনে বান্দা পুরস্কৃত হয়ে জান্নাতী হবে। মন্দ কর্ম করলে শাস্তি যোগ্য হয়ে জাহান্নামী হবে। ইসলামী আক্বিদা মতে মন্দ জিনিসের সৃষ্টি করা অপরাধ বা দোষের নয়, মন্দ বা খারাপ কাজ সম্পাদন করা অপরাধ ও দোষের। সকল প্রকার অপরাধকর্ম সম্পাদনকারী ইবলিস শয়তানকে যে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এটা সর্বজন স্বীকৃত, এতে কারো দ্বিমত নেই। (তরজুমানুস সুন্নাহ, ৩য় খন্ড, পৃ: ১৯)
তাকদীর যখন নির্ধারিত অসুস্থ হলে চিকিৎসা কেন?
ইসলামী আক্বিদামতে তাকদীরের সাথে তাদবীর তথা মানুষের কর্ম প্রচেষ্টা ও আমলের কোন সংঘাত নেই। কর্মে সম্পাদনের জন্য আসবাব তথা উপায় উপকরণ ইত্যাদি অবলম্বন করাকে তাদবীর বলে। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) বলেন, তাকদীর ও তাদবীরের মধ্যে বাস্তবে কোন সংঘাত নেই। সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! অসুস্থতার সময় ঔষধ সেবন চিকিৎসা গ্রহণ কিংবা যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা স্বরূপ ঢাল ব্যবহার করা তাকদীরের লিখন খন্ডন করতে পারে কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, উপায় উপকরণ অবলম্বন করার বিষয়টিও তাকদীরের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তাকদীরে এ কথা লিখা আছে মানুষ চিকিৎসা করে সুস্থ হবে। যুদ্ধে ঢাল ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।
তাকদীর লিপিবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে পাঁচটি অভিমত: প্রখ্যাত তাফসীরকার ও হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফিজ ইবনুল কায়্যিম (র.)’র বর্ণনা মতে তাকদীর সর্বমোট পাঁচবার লিপিবদ্ধ হয়েছে। একাধিকবার লিখন দ্বারা মূল বিষয় পরিবর্তন হয় না বরং পূর্ববর্তী অপেক্ষা পরবর্তীবারে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রথমবার: আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে। দ্বিতীয়বার: আসমান জমিন সৃষ্টির পর আওলাদে আদম সৃষ্টির পূর্বে। তৃতীয়বার: প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভে অবস্থানকালে। চতুর্থবার প্রতি বছর একবার মহিমান্বিত রজনী লায়লাতুল কদরে। পঞ্চমবার: পবিত্র কুরআনের সূরা: আর-রাহমান এর বাণী “তিনি সর্বদাই কোন না কোন কাজে রত আছেন” এর আলোকে দৈনিক একবার তাকদীর লিপিবদ্ধ হয়। (শিফাউল আলীল, পৃ: ২৩-২৪)
তাকদীর সম্পর্কে বিতর্ক থেকে বিরত থাকুন: ইসলামে তাকদীর সম্পর্কে বিতর্ক করা নিষেধ। তাকদীর নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া নিরাপদ নয়। এর তত্ত্ব উদঘাটনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি এ ব্যাপারে শুধু ঈমান আনা অপরিহার্য করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মনে রেখ! পূর্ববর্র্তী জাতিগুলো তাকদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়েছিল সুতরাং আমি তোমাদের কঠোরভাবে বলছি তোমরা বিতর্কে লিপ্ত হয়োনা। (তিরমিযী শরীফ)
নবীজি তাকদীর সম্পর্কে কাউকে বিতর্ক করতে দেখে প্রচন্ড রাগান্বিত হতেন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, “তাকদীর সম্পর্কে কেউ বিতর্ক করলে কিয়ামতের দিবসে এব্যাপারে তাকে জবাবদিহী করতে হবে। (ইবনে মাযাহ)
হে আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন সুন্নাহর বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। তাকদীরের উপর আমাদের ঈমান দৃঢ় রাখুন নিশ্চয় আপনি অনুগ্রহশীল ও দয়ালু। আমীন।
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম; খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।
[ইসলাম সম্পর্কিত পাঠকের প্রশ্নাবলি ও নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি। আগ্রহীদের বিভাগের নাম উল্লেখ করে নিচের ইমেলে প্রশ্ন পাঠাতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
Email : azadieditorial@gmail.com]
কাজী মুহাম্মদ রোকনুজ্জামান
হাশেমী নগর, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: মুসলমান বায়াত হওয়া ছাড়া কি জান্নাতি হতে পারবেনা?
উত্তর: একজন মুসলমানের ঈমান আক্বিদা ও আমলের হিফাজতের জন্য কামিল অলী হক্কানী পীর মুর্শীদের হাতে বায়াত গ্রহণ করা অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা: তাওবাহ, আয়াত: ১১৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো এরশাদ করেছেন, “আর যে আমার দিকে রুজু হয়েছে তুমি তার পথ অনুসরণ কর। (সূরা: লোকমান, আয়াত: ১৫)
একজন আক্রান্ত অসুস্থ রোগীর আরোগ্য ও সুস্থতা লাভের জন্য যেমনিভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অপরিহার্য। তেমনিভাবে মুসলমানের আত্মার পরিশুদ্ধি দুনিয়ার লোভ ও মোহ থেকে অন্তরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা উপরন্ত ঈমান ও আক্বিদার হিফাজতের জন্য একজন হক্কানী কামিল পীর মুর্শীদের আধ্যাত্বিক দীক্ষা নেয়া, কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালিত করার জন্য হক্কানী পীরের বায়াত নেয়া অতীব উপকারী ও ফলপ্রসু। অন্যথায় শয়তানী প্ররোচনা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ বিরোধীদের অশুভ চক্রান্তে ঈমানহারা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদীস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি মৃত বরণ করল অথচ তাঁর কাঁধে বায়আতের বন্ধন নেই সে জাহেলী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল। (ইমাম মুসিলম হাদীস নং: ১৮৫১)
হযরত শায়েখ শিহাব উদ্দিন সোহরাওয়ার্দী প্রণীত ্আওয়ারিফুল মা’রিফ কিতাবে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি আধ্যাত্মিক শায়খের সাহচর্য লাভ করেনি সে সফলকাম হতে পারে না। [ফাতওয়া-এ আফ্রিকা কৃত: ইমাম আহমদ রেযা (র.)]
প্রখ্যাত ইমাম আবুল কাশেম প্রণীত রিসালা-ই কোশায়রীতে বর্ণিত আছে, “হক্কানী পীরের দীক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। যার হক্কানী কামিল পীর নেই, সেই সফলতা লাভ করতে পারে না। [ফাতাওয়া-এ আফ্রিকা কৃত: ইমাম আহমদ রেযা (র.)]
বায়াতের ক্ষেত্রে চারটি শর্ত অপরিহার্য অন্যথায় ওই ব্যক্তির নিকট বায়আত হওয়া জায়েজ নেই।
১. আলেমেদ্বীন হওয়া, শরয়ী অত্যাবশ্যকীয় মাসআলা সম্পর্কে ইলমী যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া।
২. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশুদ্ধ আক্বিদার অনুসারী হওয়া।
৩. সুন্নাতের অনুসারী ও শরীয়তের পাবন্দ হওয়া, কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
৪. পীরের সীলসীলা ধারাবাহিকভাবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সম্পৃক্ত থাকা।
বর্ণিত শর্তাবলীর আলোকে হক্কানী কামিল পীরের নিকট বায়আত গ্রহণ করা সুন্নাত। [বায়আত ওয়া খিলাফাত কি আহকাম, পৃ: ৬০ কৃত: ইমাম আহমদ রেযা (র.)]