কুরআন ও হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বৈশিষ্ট্য সমূহ
(পর্ব–২য়)
আল কুরআনের আলোকে মহানবীর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব: আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবীব কে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশংসনীয় গুণাবলীর অধিকারী অনুস্মরনীয় আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করেছেন, নবীজি ছিলেন হেদায়তের সমুজ্জ্বল প্রদীপ আলোকবর্তিকা, তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণে রয়েছে বিশ্বমানবতার সামগ্রিক কল্যাণ ও শান্তি। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” (সূরা: আহযাব, আয়াত: ২১)
আল্লাহ তা’আলার তার নবীজির বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আরো এরশাদ করেছেন, হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষী হিসেবে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর প্রতি আহবানকারী উজ্বল প্রদীপ হিসেবে। (সূরা: আহযাব, আয়াত: ১৪)
হাদীস শরীফের আলোকে নবীজির অসাধারণ বৈশিষ্ট্য সমূহ: ৬০. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র থুথু মোবরকের বরকতে লবণাক্ত কুপের পানি সুস্বাদু হয়েছে। (বুখারী শরীফ), ৬১. সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর পবিত্র হাত মোবারকে পাথরও তাসবীহ পাঠ করেছে। (আবু নাঈম, খাসায়েসে কুবরা), ৬২. সরকারে কায়েনাতের বরকতে দুর্বল প্রাণীও দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়েছে। (বুখারী শরীফ), ৬৩. ওহুদ পাহাড় ও হেরা পর্বত যখন কাঁপছিল, প্রিয় রাসুলের নির্দেশে সেগুলো স্থির হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৬৪. প্রিয় রাসুলের অঙ্গুলি মোবারক থেকে পানির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
৬৫. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়ায় অস্তমিত সূর্য পুনরায় উদিত হয়েছে। (কিতাবুশ শিফা, যুরকানী)
৬৬. প্রিয় রাসুলের দোয়ার বরকতে সূর্য একস্থানে স্থির ছিল। (তিরবানী, শিফা), ৬৭. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। (বুখারী শরীফ), ৬৮. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমান ও জমিনের সব কথা জানতেন। (মিশকাত শরীফ), ৬৯.হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহ দর্শন দান করেছেন। (মসনাদে আহমদ), ৭০. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরামকে পূর্বাপর সবকিছুর সংবাদ দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ), ৭১. অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হয়েছে। (বুখারী শরীফ), ৭২. সকল নবীর মতো প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রওজা মোবারকে জিন্দা আছেন। (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী শরীফ), ৭৩. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা তৈয়্যবা থেকে হাউজে কাউসারকে অবলোকন করছেন। (বুখারী শরীফ), ৭৪. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব কথা শুনতে পান, যা অন্য লোকেরা শুনতে পারে না। (তিরমিযি শরীফ), ৭৫. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদ শরীফ পাঠকারীদের দরুদ শুনতে পান। (তাবরানী, জালাউল ইফহাম), ৭৬. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেমিকদের দরুদ শরীফ মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন। (দালাইলুল খয়রাত), ৭৭. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলের সালামের উত্তর দিয়ে থাকেন। (মসনদে আহমাদ, আবু দাউদ শরীফ), ৭৮. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব কিছুও দেখতে পান, যা অন্য লোকেরা দেখতে পায় না। (তিরমিযি শরীফ), ৭৯. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশ্চাত দিকেও সামনের দিকের মতো দেখতে পেতেন। (বুখারী শরীফ), ৮০. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের অন্ধকারও দিনের আলোতে সবকিছু সমানভাবে দেখতেন। (বায়হাকী শরীফ), ৮১. রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় নিদ্রা যেত, কিন্তু অন্তর মোবারক জাগ্রত থাকত। (বুখারী শরীফ), ৮২. সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টি জগতকে হাতের তালুর ন্যায় অবলোকন করতেন। (তাবরানী, আবু নাঈম), ৮৩. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল ধন ভাণ্ডারের চাবিকাঠিসমূহ দান করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৮৪. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ’র হুকুমে যাকে ইচ্ছে জান্নাত দান করেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৮৫. ছাহাবায়ে কেরাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাবারুকাতের জন্য উদগ্রীব থাকতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৮৬. মহানবী স্বীয় তাবারুকাত নিজের হাতে ছাহাবায়ে কেরামকে দান করতেন।(বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৮৭. ছাহাবায়ে কেরাম বিপদের সময় নবীজির উছিলা ধারণ করতেন। (তিরমিযি ও মিশকাত শরীফ), ৮৮. মহানবীর তাবারুকাত দ্বারা ছাহাবায়ে কেরাম আরোগ্য ও বরকত লাভ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৮৯. ছাহাবায়ে কেরাম প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে তাদের প্রয়োজন পেশ করতেন এবং নবীজি তাঁদের প্রয়োজন সমাধান করতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৯০. ছাহাবায়ে কেরাম প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পশম মোবারক জমিনে পড়তে দিতেন না, বরং তা সংরক্ষণ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৯১. ছাহাবায়ে কেরাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখের থুথু মোবরক ও অজুর ব্যবহৃত পানি নিজেদের চেহারা ও শরীর মর্দনে ব্যবহার করতেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
৯২. রাসূলে আকরামের দরবারে ফরিয়াদ জানালে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উছিলা অবলম্বন করলে বিপদ দূরীভূত হয়ে যায়। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ ও নাসাঈ শরীফ)
৯৩. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকে চক্ষু দান করেছেন। (কিতাবুস শিফা, আবু নাঈম)
৯৪. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোবা ব্যক্তিকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন। (কিতাবুস শিফা ও আবু নাঈম), ৯৫. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতকে জীবিত করেছেন। (কিতাবুস শিফা ও আবু নাঈম)
৯৬. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ছালমা বিন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা’র ভেঙ্গে যাওয়া গোড়ালীও সংযুক্ত করেছেন। (বুখারী শরীফ), ৯৭. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ভেঙ্গে যাওয়া গোড়ালীও সংযুক্ত করেছেন। (বুখারী শরীফ)
৯৮. রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরামের কর্তিত বাহু জোড়া লাগিয়েছেন। (আবু নাঈম)
৯৯. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বেরিয়া যাওয়া চক্ষুকে দ্বিতীয়বার স্থাপন করেছেন। (কিতাবুস শিফা ও আবু নাঈম), ১০০. রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুরারোগ্য রোগীদের সুস্থতা দান করেছেন। (তাবরানী, আবু নাঈম, খাসায়েসে কুবরা), ১০১. নবীজির পশম মোবারকের বরকতে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধে জয় লাভ করতেন। (হাকিম, বায়হাকী), ১০২. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে প্রাণীরা বহুবার সিজদা করেছেন। (তাবরানী, কিতাবুস শিফা, আবু নাঈম), ১০৩. রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতে দুধ না দেয়া বকরী দুধ দেয়া শুরু করে। (মিশকাত শরীফ), ১০৪. বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাগণ মুসলমানদের সাহায্য করেন। (বুখারী শরীফ), ১০৫. রাসুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের পূর্বেই কাফিরদের নিহত হওয়ার স্থানসমূহ চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। (মিশকাত শরীফ), ১০৬. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ধৃষ্ঠতাকারী “গোসতাখ” ও “মুরতাদ” কে বার বার দাফন করার পরও মাটি তাদেরকে গ্রহণ করেনি। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ১০৭. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়ায় গৃহের প্রাচীরও আমিন বলতো। (খাসায়েসে কুবরা), ১০৮. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি কথামালা অর্থপূর্ণ। (বুখারী শরীফ), ১০৯. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে নাম রাখা দুনিয়া ও আখিরাতে রহমত ও হিফাজতের অবলম্বন। (মাদারিজুন্নাবুওয়াত), ১১০. হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেহেস্তী ও দোযখীদের চিনতে পারতেন। (বুখারী শরীফ), ১১১. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপনামে নাম রাখা উচিত নয়। (খাসায়েসে কুবরা), ১১২. ছাহাবায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত ও পা মোবারক চুম্বন করেছেন। (আবু দাউদ শরীফ), ১১৩. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে সর্বদা সত্য কথাই বের হতো। (আবু দাউদ শরীফ), ১১৪. হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীয়তের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারী। (আহমদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ শরীফ), ১১৫. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যেমন ইচ্ছা তেমন শরিয়তের কানুনে পরিবর্তন আনতে পারতেন। (বুখারী শরীফ), ১১৬. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক হারাম করা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার মতোই। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফ), ১১৭. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ব্যাপক অর্থ প্রকাশকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ১১৮. কাফিরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারসম্পন্ন করতে প্রিয় রাসুল প্রেরিত হয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ১১৯. সৈয়দুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গনীমতের সম্পদ হালাল করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), আল্লাহ তা’আলা আমাদের কে প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মর্যাদা অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা–এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম; খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।