কুরআন ও হাদীসের আলোকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বৈশিষ্ট্যাবলী
হে মানব মণ্ডলি! আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন! জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নবীকে সকল নবীদের উপর মর্যাদামন্ডিত করেছেন। আল্লাহর সুস্পষ্ট কিতাব ও নবীজির সুন্নাত তথা আদর্শ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করুন। তাঁর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম চরিত্র ও বৈশিষ্ঠ্য অনুসরণে আদর্শ জীবন গঠন করুন। যাঁর প্রসঙ্গে তাঁর প্রভূ এরশাদ করেছেন, (হে প্রিয় হাবীব) আপনি সুমহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা: কলম, আয়াত: ৪)
আল্লাহ তা’আলা আরো এরশাদ করেছেন, আমি আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। (সূরা: ইনশিরাহ, আয়াত: ৪)
মহান আল্লাহ মানবজাতির ইহজাগতিক ও পারলৌকিক সুখ–শান্তি লাভের উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে তাঁর প্রতিনিধি বা নবী–রাসুল প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষ নবী ও রাসুল হলেন মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি স্বয়ং আল্লাহর বন্ধু এবং নবী রাসুলের সর্দার হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই তা প্রমাণ করে। নিম্নবর্ণিত হাদিস শরীফসমূহ এবং নির্ভরযোগ্য কিতাবে উল্লেখিত বাণী’র প্রতি দৃষ্টি দিলে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে যেকোন ব্যক্তি মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শান–মান মর্যাদা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কতো উত্তম ছিল সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জনে সক্ষম হবেন।
১. রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগত দিক থেকে সর্ব প্রথম নবী। (তিরমিযি শরীফ), ২. প্রেরণের দিক দিয়ে প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৩. আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম স্বীয় “নুর” থেকে প্রিয় রাসুলের “নুর” সৃষ্টি করেন। (বায়হাকী শরীফ ও মাওয়াহেবে লাদুনিয়া), ৪. রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রেম ভালবাসা ছাড়া কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৫. প্রিয় রাসুলকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রাসুল রূপে প্রেরণ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৬. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (তিরমিযি শরীফ), ৭. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রিয় হাবীব। (মিশকাত শরীফ), ৮. রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান। (আবু দাউদ ইবনে আসাকির), ৯. ইমামুল আম্বিয়ার মু’জিযা সকল নবীর চেয়ে অধিক। (খাসায়েসুল কুবরা), ১০. আল্লাহ তায়লা তাঁর কতেক নাম প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দান করেছেন। (কিতাবুস শিফা, আবু নাঈম, খাসায়েসে কুবরা), ১১. প্রিয় রাসুলের নাম মোবারক “মুহাম্মদ” আল্লাহর পবিত্র নাম “মাহমুদ” থেকে নির্গত। (খাসায়েসে কুবরা), ১২. তাওরাত, ইঞ্জিল ও অন্যান্য আল্লাহর কিতাবসমূহে প্রিয় রাসূলের আলোচনা বিদ্যামান রয়েছে। (ইবনে আসাকির, দারমী), ১৩. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়ত পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহের রহিতকারী এবং কিয়ামত অবধি তা বিদ্যমান থাকবে। (খাসায়েসে কুবরা), ১৪. যদি অন্যান্য নবীগণ প্রিয়নবীর যুগে আসতেন তাঁরা তাঁর অনুসরণ ও সাহায্য প্রার্থনা করতেন। (খাসায়েসে কুবরা), ১৫. রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্য সমগ্র জমিনকে পবিত্রকারী ও মসজিদে রূপান্তর করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ১৬. আল্লাহ তায়ালা প্রিয় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমবয়সীকে তাঁর অনুগত করে দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ), ১৭. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সমগ্র সৃষ্টিরাজির জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ), ১৮. হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবরাহিম (আ.) এর দুআ। (মিশকাত শরীফ)
১৯. হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ। (মিশকাত শরীফ), ২০. নবীজির শুভাগমনকালে এমন নুর উদ্ভাসিত হয়েছে যা দ্বারা পারস্যের রাজপ্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছিল। (মিশকাত শরীফ), ২১. প্রিয় রাসুল সিজদারত অবস্থায় এ পৃথিবীতে তাশরীফ আনেন। (খাসায়েসে কুবরা),২২. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন, কেউ তাঁর লজ্জাস্থান দেখেনি। (তাবরানী)
২৩. প্রিয় রাসুল দোলনায় চাঁদের সাথে খেলতেন, চন্দ্র তাঁর ইঙ্গিতে চলত। (বায়হাকী শরীফ)
২৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবকালে মূর্তি সমূহের মুখ মণ্ডল অবনত হয়ে গিয়েছিল। (বায়হাকী শরীফ), ২৫.ফেরেশতারা প্রিয় রাসুলের দোলনাকে দোলা দিত। (বায়হাকী), ২৬. প্রিয় নবীর আগমনকালে মূর্তিসমূহ উপুড় হয়ে পড়েছিল। (আবু নাঈম, খাসায়েসে কুবরা)
২৭. প্রিয় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শুভাগমনের কারণে শয়তানদেরকে আসমান পর্যন্ত পৌঁছা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। (বায়হাকী শরীফ), ২৮. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাইল (আ) কে মূল আকৃতিতে দেখেছেন। (মুসলিম শরীফ), ২৯. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুসা (আ.) কে কবরে নামাজরত অবস্থায় দেখেছেন। (মুসলিম শরীফ), ৩০. হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতেক জিনসমূহেরও ইমামতি করেছেন। (মুসলিম শরীফ), ৩১. হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসে সকল নবীগণের ইমাম হয়েছেন। (মুসলিম শরীফ), ৩২. মানুষের ন্যায় জিনেরাও প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে ইসলাম গ্রহণের জন্য আগমন করতেন। (আবু নঈম, খাসায়েসে কুবরা), ৩৩. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ সর্বযুুগের চেয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ। (মুসলিম শরীফ), ৩৪. প্রিয়নবীর গৃহ মোবারক এবং মিম্বর শরীফের মাঝখানের অংশ জান্নাতের টুকরা। (বুখারী শরীফ), ৩৫. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা তৈয়্যবায় মৃত্যুবরণকারীদেরকে বিশেষভাবে শাফায়াত করবেন। (তিরমিযি শরীফ), ৩৬. রওজা শরীফের জিয়ারতকারীদের জন্য শাফায়াত করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বায়হাকী শরীফ), ৩৭. প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা সত্তর হাজার ফেরেস্তা দরুদ সালাম পাঠের জন্য রওজা শরীফে হাজিরা দেন। (দারমী ও মিশকাত শরীফ), ৩৮. স্বপ্নযোগে প্রিয় রাসুলের সাক্ষাৎলাভ করা সত্য। কেননা, শয়তান তাঁর আকৃতি ধারণ করতে পারে না। (বুখারী শরীফ), ৩৯. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিরাজ স্বশরীরে হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ), ৪০. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো কাউকে সৃষ্টি করা হয় নি, হবেও না। (বুখারী শরীফ), ৪১. প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর পবিত্র দেহ মোবারকের ছায়া ছিল না। (যুরকানী ও খাসায়েসে কুবরা), ৪২. আরশ, আসমান ও বেহেশতের প্রতিটি বস্তুতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নাম মোবারক লিপিবদ্ধ রয়েছে। (খাসায়েসে কুবরা)
৪৩. নবীজির মাতা–পিতাকে জীবিত করা হয়েছে এবং তাঁরা উভয়ই প্রিয় রাসুলের উপর ঈমান এনেছেন। (খাসায়েসে কুবরা)
৪৪. প্রিয় রাসুলের পূর্বপুুরুষদের কেউই মুশরিক বা মূর্তিপূজারী ছিলেন না। (তাবরানী ও খাসায়েসে কুবরা)
৪৫. আযানে প্রিয়নবীর নাম শ্রবণ করে পাঠকারী ও বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বনকারীর জন্য রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগফিরাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। (মুসনাদুল ফিরদাউস, রুহুল বায়ান), ৪৬. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠের কারণে দুআ দ্রুত কবুল হয়। (তিরমিযি শরীফ),৪৭. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস শরীফ পাঠ করা ইবাদত। (খাসায়েসে কুবরা), ৪৮. রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘাম মোবারক মিশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (আবু নাঈম, যুরকানী), ৪৯. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কখনোই হাই তোলেন নি, কখনো তাঁর স্বপ্নদোষ হয় নি। (মোয়াহেবে লাদুনিয়া), ৫০. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারকে কোন সময়ে কোন মশা–মাছি বসেনি। (কিতাবুস শিফা, মোয়াহেবে লুদুনিয়া, খাসায়েসে কুবরা), ৫১. প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন প্রাণীর উপর সওয়ার হতেন তখন উক্ত প্রাণী প্রস্রাব করতো না। (খাসায়েসে কুবরা), ৫২. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিচ্ছেদে খেজুর বৃক্ষ ক্রন্দন করেছে। (বুখারী শরীফ), ৫৩. পশুপাখি ও প্রাণীজগৎকে প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর অনুগত করে দেয়া হয়েছে। (মিশকাত শরীফ), ৫৪. প্রাণীসমূহ ও প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মিশকাত শরীফ), ৫৫. বৃক্ষসমূহও প্রিয় নবীর রিসালতের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মিশকাত শরীফ) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য পাথরকে নরম করে দেয়া হয়েছে। (আবু নাঈম), ৫৬. পাহাড় ও বৃক্ষরাজি প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ বলতো। (তিরমিযি শরীফ), ৫৭, প্রাণীরাও প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সঙ্কটমুক্তির জন্য দুআ প্রার্থনা করতো। (মিশকাত শরীফ), ৫৮. প্রিয় নবীর মুখের থুথু মোবারকের বরকতে হুদায়বিয়ার শুকনো কুপ প্রবাহিত হয়েছে। (বুখারী শরীফ), ৫৯. সমস্ত সৃষ্টির করুণার আধার রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতে নিতান্ত স্বল্প খাবার এক হাজার ছাহাবাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবীবের আদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা–এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী); খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।