খাগড়াছড়ির সবুজ পাহাড়ের চূড়া পাকা ধানে হলুদ রূপ ধারণ করেছে। ধানের পাশাপাশি সেখানে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ করেছে জুমিয়ারা। জুমের উৎপাদিত খাদ্য শস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সবজি ও কৃষিজ পণ্য বিক্রি করে চলে জুমিয়াদের সংসার। তবে এবার ফসলের বীজ রোপণের সময় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। ফলন কম হওয়ায় যারপরনাই হতাশ চাষিরা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ৮ মাইল এলাকায় ৪ একর পাহাড়ি টিলা ভূমিতে জুম চাষ করেছেন কৃষক ললিত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, এবার ধানের উৎপাদন কম। জুমে চারা রোপণের সময় ঠিকমতো বৃষ্টি হয়নি। পরে অসময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। ধান পাকার পর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কম ধান পেয়েছি। ধান ছাড়াও মারফা, মিষ্টিকুমড়া, তিলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও কমেছে।
একই এলাকার কৃষক সোনাবাবু ত্রিপুরা বলেন, আমি এবছর স্থানীয় গ্যালুন জাতের ধান লাগিয়েছি। কিন্ত ফলন গত মৌসুমের চেয়ে কম। দেরিতে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এ বিপর্যয়। ধান কিছু পাকছে কিছু পাকে নাই। এবার আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের কাছে আমরা সহযোগিতা চাই। কিন্তু কখনোই পাই না।
তবে জুমে উৎপাদন বাড়াতে সনাতনী জুমের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করার উপর জোর দিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। জুমের ফলন বাড়াতে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ রোপণের পরামর্শ দেয়া হয়। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মালেক জানান, জুমে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিভিন্ন সবজির যে বীজ রয়েছে সেগুলো রোপণ করলে জুমের উৎপাদন বাড়বে। ফলন বাড়াতে সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতির দিকে ঝুঁকতে হবে চাষিদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার খাগড়াছড়িতে জুমের উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১শ ৮০ মেট্রিক টন। এবছর অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে জুমের ফসল উৎপাদন কমেছে। ফসল ঘরে তোলার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।